আমাকে বাঁচাও আমাকে বাঁচাও


প্রকৌশল প্রতিবেদক:
আমাকে বাঁচাও আমাকে বাঁচাও
  • Font increase
  • Font Decrease

ঈদের সন্ধ্যায় একটি সাদা কাগজে লেখা পাওয়া যায়, তুমি তোমার বোনকে আমার সাথে বিয়ে কেন দাওনি, তাই প্রতিশোধ নিলাম। আমার মা এটা সহ্য করতে না পেরে তখন অসুস্থ্য হয়ে স্ট্রোক করে মারা যায়, চিকিৎসা খরচের টাকা তোমার কাছ থেকে নিয়ে নিলাম, আর আমি ও আত্মহত্যা করবো, যার জন্য তুমি দায়ি থাকবে।

বাড়ির দারোয়ান মাথা ফেটে রক্তাক্ত অবস্থায় বাড়ি থেকে বের হয়ে দৌড়াচ্ছে আর বলছে আমাকে বাচাও, আমাকে বাচাও।

খবর এলো রমনা থানায়, সাথে সাথে রমনা থানার টিম পৌছে যায় বাসায়, গিয়ে চিঠিটি পায় ফ্লাটের ভাড়াটিয়ার বাসায় যেখানে আত্মহত্যার কথা বলা আছে একজন লোকের রেফারেন্সে। 

বাসা চুরি হয়েছে বুঝা যাচ্ছে, পুলিশ কাকে সন্দেহ করবে বুঝা যাচ্ছেনা তখনো। কাজের বুয়াকে হেফাজতে নিলো পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য, সে কিছুই জানেনা, পুলিশ ডাকার সাথে সাথে চলে এসেছে।

দারোয়ানকে পাওয়া যাচ্ছেনা, তার ফোন এই বাসাতেই ফেলে রেখে গেছে, কোন সন্ধান পাওয়া যাচ্ছেনা তার। আরো বিপাকে পুলিশ, যে লোকটার মাথা ফেটে রক্তাক্ত সে কোথায় গেলো?

ঘন্টা দুয়েক পরে দারোয়ানের ফোন তার নিকটস্থ এই বাড়ির এক লোককে যে সে বেচে আছে, দৌড়ে ভাইয়ের বাসায় গিয়ে, হাসপাতালে গিয়ে ট্রিটমেন্ট নিয়ে নিজেকে বাচিয়েছে। দারোয়ানের লোকেশন জানার সাথে সাথে তাকে হেফাজতে নেয়া হলো।

এবার কাজের বুয়া বলে দারোয়ান চুরি করেছে, আর দারোয়ান বলে কাজের বুয়া...

এভাবে চললো বেশ কিছুক্ষন, পুলিশ তার মেধা ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে বের করলো আসল সত্য;
ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া ঈদের ছুটিতে বাড়িতে গেছে জানার পর, কাজের বুয়া প্ল্যান করে চুরি করার, আগে থেকেই চাবির ডুপ্লিকেট কপি বানায় সে, ঈদের দিন এসে তালা খুলে দারোয়ান কে ডাকে সে ফ্যান ঠিক করবে এই ওছিলায়, দারোয়ান(ইলেক্ট্রিক কাজ জানে) ও আসে ফ্যান ঠিক করতে। এরপর দারোয়ানকে ১৫০০ টাকা দেয় বুয়া আর একটা চিঠি লিখে দিতে বলে যেটা প্রথমে বলেছি।

চিঠি লেখা শেষে বুয়া বলে তাকে (দারোয়ান) একটা সারপ্রাইজ দিবে সে। সারপ্রাইজটা নিতে হলে চোখ বাধতে হবে, এরপর চোখ বেধে দারোয়ানকে টুলের উপর উঠায় বুয়া, টুলের উপরে গলায় ফাসি দেয়ার দড়ি রেডি ছিলো, দাড় করিয়ে দড়ি গলায় পরিয়ে দিয়ে টুল সরিয়ে নেয় সে।

এতোক্ষনে দারোয়ান সব বুঝতে পারে, সে (দারোয়ান) দড়ি হাত দিয়ে ধরে ঝুলন্ত অবস্থায় দড়ি খুলতে সক্ষম হয়, এবার হিংস্র বুয়া কাচের মগ দিয়ে দারোয়ানের মাথায় উপর্যুপরি মাথায় আঘাত হানে, টার্গেট ছিলো চুরিটা প্রমানশুন্য করা।

রক্তাক্ত দারোয়ান বুয়াকে ধাক্কা দিয়ে বের হয়ে প্রায় জ্ঞ্যানশূন্য  অবস্থায় দৌড়ে পালিয়ে জীবন বাচিয়েছে।
বুয়া ভেবেছে দারোয়ান মারা গিয়েছে এজন্য সে আবার ঠান্ডা মাথায় নিজেকে নির্দোষ প্রমানের জন্য ফিরে এসেছে।

দারোয়ান যখন বললো, বুয়ার মাথার কর্নারে দেখেন রক্তের দাগ আছে আর ১৫০০ টাকা টেবিলে আছে যেটা তাকে সে (বুয়া) দিয়েছিলো। সব মিলে গেলো। অবশেষে বুয়াও পুলিশের কাছে স্বীকার করলেন তার এই লৌহমর্ষক প্ল্যানের কথা।

মামলাটি কিন্তু অনেক দিকেই মোড় নিতে পারতো...
রমনা থানা পুলিশ অত্যন্ত বিচক্ষনতার সহিত মেইন কালপিটকে বের করেছে এবং আইনের আওতায় এনেছে, ধন্যবাদ টিম রমনাকে।

রোববার ডিএমপি র সহকারী পুলিশ কমিশনার, রমনা জোন(সদ্য পদোন্নতি প্রাপ্ত অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার) এস এম শামীম এতথ্য জানান।

প্রকৌশল নিউজ/এমআরএস