ঈদে আবেগের বশবর্তী হয়ে ঘোরাঘুরি না করতে প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ

আবেগের বশবর্তী হয়ে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ঘোরাঘুরি না করার জন্য জনগণের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঈদ উদযাপন যেন করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বাড়ার উপলক্ষ না হয়ে উঠে সেদিকে খেয়াল রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

ঈদে আবেগের বশবর্তী হয়ে ঘোরাঘুরি না করতে প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ

আবেগের বশবর্তী হয়ে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ঘোরাঘুরি না করার জন্য জনগণের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঈদ উদযাপন যেন করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বাড়ার উপলক্ষ না হয়ে উঠে সেদিকে খেয়াল রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (১৩ মে) সন্ধ্যায় ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেশেই যাতে টিকা উৎপাদন করতে পারি সে ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। নিজেদের টিকা তৈরিতে কয়েক মাস সময় লাগবে। আমরা দেশের সব নাগরিককে টিকার আওতায় নিয়ে আসব, ইনশাআল্লাহ।

শেখ হাসিনা বলেন, সবচেয়ে কার্যকর এবং পরীক্ষিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দিয়েই আমরা গণটিকাকরণ কার্যক্রম শুরু করেছি। আপনারা জেনেছেন, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ টিকা রফতানির ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ফলে সরবরাহ ব্যবস্থায় কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। 

তিনি বলেন, আমরা বিকল্প উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছি। এরইমধ্যে রাশিয়া এবং চীনের টিকা উৎপাদনকারী সংস্থার সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে। আমরা উপহার হিসেবে চীনের কাছ থেকে টিকা পেয়েছি। টিকা পাওয়ার জন্য আমেরিকার কাছেও অনুরোধ জানিয়েছি। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব টিকাকরণ সংস্থা কোভ্যাক্সের কাছ থেকেও আমরা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ টিকা পাব। বিভিন্ন উৎস থেকে আমরা এক কোটি টিকা কেনার ব্যবস্থা নিয়েছি। খুব শিগগিরই দেশে টিকা আসতে শুরু করবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আসুন, আমরা সবাই যে যেখানে আছি সেখান থেকেই ঈদের আনন্দ উপভোগ করি। বিত্তবান যারা আছেন বা যাদের সামর্থ্য আছে, তাদের প্রতি অনুরোধ, এই দুঃসময়ে আপনার দরিদ্র প্রতিবেশী, গ্রামবাসী বা এলাকাবাসীর পাশে দাঁড়ান। তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। 

তিনি বলেন, আপনার সাহায্য হয়তো একটি পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফোটাবে। দেখবেন তাদের হাসিমুখ আপনার হৃদয়-মনকেও পরিপূর্ণ করে তুলবে ঈদের আনন্দে। মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোই সবচেয়ে বড় কর্তব্য। আমরা যেন এই কর্তব্যকর্ম ভুলে না যাই। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডাক্তার, নার্স, অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীসহ কয়েকটি পেশার কর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সামনে থেকে কোভিড-১৯ রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। আবার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সশস্ত্রবাহিনীর সদস্য এবং কেন্দ্রীয় ও মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা লকডাউন বা চলাচলের বিধিনিষেধ বলবৎ করতে মাঠে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। ত্রাণসামগ্রী বিতরণসহ সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। সংবাদকর্মীরা সংক্রমণের ঝুঁকি উপেক্ষা করে সংবাদ পরিবেশনের কাজ করে যাচ্ছেন। সবাইকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। 

তিনি বলেন, করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে বহু স্বাস্থ্যকর্মী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং বিভিন্ন সংস্থার কর্মকতা-কর্মচারী প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া গত এক বছরে আমরা আমাদের অনেক প্রিয়জনকে হারিয়েছি। আমি সবার রুহের মাগফিরাত ও আত্মার শান্তি কামনা করছি। শোক-সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।

শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে আমরা যেমন সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিয়েছি, তেমনি আক্রান্তদের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ উদ্যোগ নিয়েছি। এরইমধ্যে আমরা চিকিৎসা সক্ষমতা অনেকগুণ বাড়িয়েছি। সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হাসপাতালকেও আমরা করোনাভাইরাস চিকিৎসায় সম্পৃক্ত করেছি।

তিনি বলেন, গত মাসে মহাখালীর ডিএনসিসি মার্কেটে দুই হাজার শয্যার কোভিড-১৯ হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে। গত বছর মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ছয় হাজার ১৬৬ জন ডাক্তার, পাঁচ হাজার ৫৪ জন নার্স এবং প্রায় সাড়ে চার হাজার অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। জেলা হাসপাতালগুলোসহ দেশের ১৩০টি সরকারি হাসপাতালে কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নাগরিক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে মাস্কের ব্যবহার অত্যন্ত ফলপ্রসূ বলে প্রমাণিত হয়েছে। কাজেই বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করবেন। পাশাপাশি যথাসম্ভব ঘনঘন সাবান-পানি দিয়ে হাত পরিষ্কার করে নিন অথবা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করুন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন। সেই সঙ্গে আপনারা নিজেরা গরম পানির ভাপ নিতে পারেন।

প্রকৌশলনিউজ/এসআই