একজন সালমা খাতুন হয়ে উঠার গল্প

একজন সালমা খাতুন হয়ে উঠার গল্প

বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের কাণ্ডারি সালমা খাতুন। তিনি দেশের প্রথম নারী ক্রিকেটার যিনি কিনা বিশ্বজুড়ে সেরা অলরাউন্ডার হতে পেরেছেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট টি-টোয়েন্টি দলের গর্বিত অধিনায়ক। মিডল অর্ডারে যার নির্ভার ব্যাটিং আর ডানহাতি অফস্পিন অনেক ম্যাচেই বাংলাদেশকে টেনে তুলেছে।

খুলনার মিলকী দেয়াড়া গ্রামে ১৯৯০ সালের অক্টোবর মাসের প্রথম দিনে জন্ম তার। চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি। ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়েছেন সালমা খাতুন। তারপর আর পড়াশোনাই করা হয়নি তার। ক্রিকেট খেলাটা শুরু তারপর। 

বাবা-মায়ের নিষেধ ছিল অনেক। কিন্তু একেবারে যে উৎসাহ দেননি তা-ও নয়। সেসব অল্প অল্প উৎসাহই এগিয়ে নিয়েছে সালমাকে। নিজের স্বপ্ন পূরণের পথে প্রতিনিয়ত এগিয়েছেন একটু একটু করে। গ্রামে তো আর মেয়েদের ক্রিকেট সেভাবে ছিল না। তাই খেলতেন ছেলেদের সঙ্গে। পুরো ১১ জনের দলে সালমা কেবল নারী। তবে পুরুষদের সঙ্গে তার পারফরম্যান্সকে আলাদা করার কোনো উপায় ছিল না। টক্কর দিতেন সমানে সমানে।

একটি মেয়ে ক্রিকেট খেলছে, তা নিয়ে বিস্তর সমালোচনা হতো। বাবা-মায়ের কাছেও অভিযোগ দিতো। কিন্তু লাভ হয়নি। সালমা মন খারাপ করতেন না একটুও। মামাদের পাশে পেয়েছিলেন। সেটা তার স্বপ্নের পথে অনেকটা পাথেয় হয়েছিলো।

কোচ ইমতিয়াজ হোসেন পিলুর হাতে গড়া ক্রিকেটার সালমা খাতুন। তার হাতেই পেয়েছিলেন প্রথম ব্যাটটিও। এছাড়া এহসানুল হককেও পাশে পেয়েছেন পুরোটা ক্যারিয়ার জুড়ে।

লাল-সবুজ জার্সিতে সালমা খাতুনের অভিষেক করেন ২০০৮ সালে। তখনও বাংলাদেশ ওয়ানডে স্ট্যাটাস পায়নি। সে বছরই অধিনায়ক হন তিনি। তার নেতৃত্বেই ওয়ানডে স্ট্যাটাস পায় বাংলাদেশ। পরে একাধিকবার অধিনায়ক হয়েছেন। এখনও তিনি দলের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক। এই সালমার হাত ধরেই নারী দল দেশের প্রথম শিরোপা জিতেছে।  জাতীয় দলের পাশাপাশি ক্লাব ক্রিকেটের নিয়মিত মুখ তিনি। 

সালমার মতো যারা গ্রাম থেকে ক্রিকেট খেলে এসেছেন, তারা জানেন পথটা কত বন্ধুর। এই জায়গায় সফলতার একমাত্র চাবিকাঠি হলো পরিশ্রম। তিনি নিজেও টের পান সব সমস্যার কথা। তাই চিন্তা করেন কিভাবে সবকিছু পরিবর্তন করা যাবে। কী করলে নারী ক্রিকেটকে গুরুত্বের চোখে দেখা হবে।

নিজে পড়াশোনা করতে পারেননি। কিন্তু ক্রিকেটে আসার পর টের পান, এটার কোনো বিকল্প নেই। তাই ভবিষ্যৎ নারী ক্রিকেটারদের পড়াশোনায় জোর দেওয়ার পক্ষে তিনি। খুব কষ্ট করে ক্রিকেটার হতে পেরেছেন সালমা। সেই কষ্টের পথ যেন সবার না হয়, সে চেষ্টা করতে চান তিনি। দেশের সেরা এই নারী ক্রিকেটারের ইচ্ছা, অবসর নেওয়ার পর কোচ হওয়া। অবশ্যই স্বপ্ন জাতীয় দলের কোচ হওয়া। কিন্তু সেটার আগে তৃণমূল ক্রিকেটের কোচ হিসেবেই কাজ শুরু করতে চান।