তিন বাঁহাতির জাদুকরী ব্যাটিংয়ে প্রথম দিন টাইগারদের

মুমিনুল হক টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলেন। ধারাভাষ্যকার শামীম আশরাফ চৌধুরী ও রাসেল আরনাল্ড বললেন সাহসী সিদ্ধান্ত। কেন? ‘উইকেটে ঘাস আছে। শ্রীলঙ্কার পেসাররা রয়েছেনে ফর্মে। পাল্লেকেলের উইকেটে পাওয়া যাবে বাউন্স।’ বাংলাদেশ সাহস দেখালেন। দিন শেষে জয়ও করলেন। ক্যান্ডি টেস্টের প্রথম দিন শেষে ২ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে জমা ৩০২ রান। মুমিনুল হক -৬৪ ও নাজমুল হোসেন শান্ত ১২৬। সেঞ্চুরি পাওয়ার সুযোগ ছিল তামিম ইকবালেরও। কিন্তু ১০ রানের আক্ষেপে পুড়েছেন দেশসেরা ওপেনার।

তিন বাঁহাতির জাদুকরী ব্যাটিংয়ে প্রথম দিন টাইগারদের

মুমিনুল হক টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলেন। ধারাভাষ্যকার শামীম আশরাফ চৌধুরী ও রাসেল আরনাল্ড বললেন সাহসী সিদ্ধান্ত। কেন? ‘উইকেটে ঘাস আছে। শ্রীলঙ্কার পেসাররা রয়েছেনে ফর্মে। পাল্লেকেলের উইকেটে পাওয়া যাবে বাউন্স।’ বাংলাদেশ সাহস দেখালেন। দিন শেষে জয়ও করলেন। ক্যান্ডি টেস্টের প্রথম দিন শেষে ২ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে জমা ৩০২ রান। মুমিনুল হক -৬৪ ও নাজমুল হোসেন শান্ত ১২৬। সেঞ্চুরি পাওয়ার সুযোগ ছিল তামিম ইকবালেরও। কিন্তু ১০ রানের আক্ষেপে পুড়েছেন দেশসেরা ওপেনার।

ব্যাটসম্যান রান ফোয়ারার দিনে একমাত্র ব্যর্থ হয়েছেন সাইফ হাসান। ইনিংসের শুরুতে ফিরেছেন শূন্য রানে।  প্রভাতের সূর্য নাকি বলে দেয় দিনের পূর্বাভাস। কিন্তু এবার তো উল্টো হলো!

পূর্বের সূর্য তখনও পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামের সবুজ গালিচাকে রূপালি রূপে রাঙিয়ে তুলছিল। বাংলাদেশের জন্য রূপালি সকালের শুরুটা ছিল তালগোল পাকানো। কিন্তু বুধবার দিন শেষে চোখে মুখে প্রাপ্তির আনন্দ, দাপট দেখানোর তৃপ্তি। কে জানত, পশ্চিমের কোলে যখন সূর্য ডুববে, তখন এগিয়ে থাকবে বাংলাদেশ। অতিথিদের হয়ে সেই কাজটা করেছেন তিন বাঁহাতি। তামিম, শান্ত, মুমিনুল তিনজনই রান পেয়েছেন। 

ইনিংস বড় করেছেন। কিন্তু নিশ্চিতভাবেই তিনজনের অনুভূতি ভিন্ন। তামিম দুই বছর পর টেস্ট সেঞ্চুরির খুব কাছে ছিলেন। কিন্তু তার ধ্রুপদী ইনিংসটির ‘অপমৃত্যু’ হয় ৯০ রানে। নিশ্চিত দিন শেষে সেঞ্চুরির আক্ষেপ থাকবে দেশসেরা ওপেনারের। ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি পেয়ে নিশ্চিত আকাশে উড়ছেন শান্ত। আর অধিনায়ক মুমিনুল সেঞ্চুরির অপেক্ষায় আছেন। এ সেঞ্চুরি নিশ্চিতভাবেই তার দীর্ঘ আকাঙ্খিত। সাদা পোশাকে ১০ সেঞ্চুরি পেলেও এখনও বিদেশের মাটিতে সেঞ্চুরি নেই।

নিশ্চিতভাবেই ৩৬ রানের অপেক্ষার তর সইছে না দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি হাঁকানো এ ব্যাটসম্যানের। ইনজুরির কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে পারেননি সাদমান। চট্টগ্রামে হাঁকিয়েছিলেন হাফ সেঞ্চুরি। কিন্তু তাকে টপকে এ টেস্টে জায়গা হয় সাইফ হাসানের। প্রতিশ্রুতিশীল এ ব্যাটসম্যান এবারও নিজেকে মেলে ধরতে ব্যর্থ। বাঁহাতি পেসার বিশ্ব ফার্নান্ডোর বল মিস করে এলবিডব্লিউ হন এ ব্যাটসম্যান।

পরের পুরো দিনের গল্পটা পুরোটা বাংলাদেশের। গল্পের প্রথম অংশের নায়ক তামিম। দ্বিতীয় অংশের শান্ত। পার্শ্বনায়ক মুমিনুল। দ্বিতীয় উইকেটে তামিম ও শান্ত যোগ করলেন ১৪৪ রান। শান্ত ও মুমিনুলের ব্যাট থেকে আসল ১৫০ রান। তাতে দীর্ঘদিন পর সাদা পোশাকে বলার মতো একটি দিন কাটাল বাংলাদেশ। টস জিতে ব্যাটিং নেওয়ার সাহসী সিদ্ধান্তের মূল লড়াইটা সকালে করে দিয়েছেন তামিম। ইনিংসের শুরু থেকে আক্রমণাত্মক খেলে অনায়েস রান তুলেছেন। সব ক্রিকেটীয় শট। কোনো বাড়তি ঝুঁকি নেই। বলের ওপর গিয়ে শট খেলছিলেন। পেসারদের লাইন ও লেংথ যাচাই করে ড্রাইভ, ফ্লিক, পাঞ্চ খেলেছেন। আগ্রাসন দেখালেন, বাউন্ডারির ফুলঝুরি ছোটালেন। তাতে স্কোরবোর্ড দৌড়াচ্ছিল। এক মুহূর্তের জন্য তাকে এলোমেলো মনে হয়নি। ৫৩ বলে পাওয়া হাফ সেঞ্চুরি সেঞ্চুরিতে রূপ দেওয়ার পথেই ছিলেন তিনি। দুই বছর পর টেস্ট সেঞ্চুরির অপেক্ষা ফুরাবে তার।

কিন্তু ৯০’র ঘরে গিয়ে পথ ভুললেন বাঁহাতি ওপেনার। আবার তিনি নার্ভাস নাইন্টিজের শিকার। টেস্ট ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বার, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পঞ্চমবার। বিশ্ব ফার্নান্ডোর লেংথ বল খোঁচা মেরে উইকেটের পেছন থেকে বাউন্ডারি আদায় করতে চেয়েছিলেন তামিম। বিপদ ডেকে আনেন ওই শটে। বল যায় একমাত্র স্লিপ ফিল্ডার থিরিমান্নের হাতে। মুহূর্তেই যেন সব ওলটপালট তামিমের। ১০১ বলে ৯০ রান করে ফিরলেন দেশসেরা ওপেনার। ১৫ চারে সাজানো অসাধারণ ইনিংসের ‘অপমৃত্যু’ ওই শটে। শান্ত শুরুতে নড়বড়ে হলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে ফিরে পেয়েছেন। পেসার সুরঙ্গা লাকমালকে সপ্তম ওভারের প্রথম বলে বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে রানের খাতা খুলে তিনি। বাকিটা পথ শান্ত কাটিয়ে দেন স্বাচ্ছন্দ্যে। সেশন বাই সেশন ব্যাটিং করেছেন।

মনোবল হারাননি। ধৈর্যর পরীক্ষা দিয়েছেন। নিজের সামর্থের জানান দিয়ে পেয়েছে যান ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি। ১২০ বলে পেয়েছিলেন ফিফটি। সেঞ্চুরি ছুঁতে খেলেছেন আরও ১১৫ বল। তামিম ৯০ রানে সাজঘরে ফিরেছেন উইকেট উপহার দিয়ে। শান্ত সেই ভুল করেননি। নার্ভাস নাইন্টিজে ছিলেন বাড়তি সতর্ক। ১৯৭ বলে পৌঁছে গিয়েছিলেন নব্বইয়ের ঘরে। পরের ১০ রান পেতে খেলেছেন ৩৮ বল। বাউন্ডারি মেরেছেন মাত্র একটি। দিনশেষে তার নামের পাশে ১২৬ রান ঝলঝল করছে।

ইনিংসটিকে কোথায় নিয়ে যেতে পারেন সেটাই দেখার। দুই বাঁহাতির মতো মুমিনুলও ছিলেন অনন্য। এক মুহূর্তের জন্য তাকে বিচলিত মনে হয়। অনায়েসে রান তুলেছেন। শ্রীলঙ্কার পেসার কিংবা স্পিনাররা তাকে ভোগাতে পারেননি। দারুণ ব্যাটিংয়ে হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছেন। শ্রীলঙ্কার মাটিতে দেশের বাইরে প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নিতে পারেন কিনা সেটাই দেখার। অপেক্ষা ৩৬ রানের। উইকেট সবুজাভ হলেও শ্রীলঙ্কাররা পেসাররা ধারাবাহিক ছিলেন না। প্রচুর বাউন্ডারির বল দিয়েছেন। সঙ্গে অতিরিক্ত খাত খেতেও এসেছে ২২ রান। পুরো দিন ওয়াইড বল করেছেন ৭টি। নো বল ছিল ২ রান। এমন বোলিংয়ের পর তাদের বোলিং নির্বিষ বলাই যায়।

প্রকৌশল নিউজ/এমএস