প্রযুক্তির ব্যবহারে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাড়ছে

প্রযুক্তির ব্যবহারে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাড়ছে

বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি সেবার বাড়ার পাশাপাশি এ থেকে মানুষের কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে। সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো ডিজিটাল অর্থনীতিতে অগ্রগতি সাধন করেছে। ডিজিটাল বা প্রযুক্তিভিত্তিক কার্যক্রমে জোর দিয়ে এবং প্রযুক্তিভিত্তিক কার্যক্রমের সঙ্গে শত কোটি মানুষকে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে তারা অর্থনীতিতে উন্নতি ঘটাচ্ছে।


সোমবার মাস্টারকার্ড টাফটস ইউনিভার্সিটির দ্য ফ্লেচার স্কুলের সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে ডিজিটাল ইনটেলিজেন্স ইনডেক্স (ডিআইআই) বা ডিজিটাল বুদ্ধিমত্তা সূচক প্রকাশ করেছে। সেখানে এসব তথ্য জানানো হয়। 

এর আগে ২০১৪ ও ২০১৭ সালে এ সূচক প্রকাশ করা হয়। তবে এবারের ডিজিটাল ইনটেলিজেন্স ইনডেক্স (ডিআইআই) বা ডিজিটাল বুদ্ধিমত্তা সূচকে বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল কার্যক্রমে উন্নয়নের চিত্র ফুটে উঠেছে।

এতে পরিবর্তনের চালিকাশক্তি ও গতিশীলতা, বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস মহামারির চ্যালেঞ্জ এবং এ মহামারি পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জনে প্রযুক্তিভিত্তিক কার্যক্রমের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়। লক্ষণীয় বিষয় হলো, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মধ্যে সিঙ্গাপুর, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ান প্রযুক্তি খাতে অন্য দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে রয়েছে।

লকডাউনের মধ্যেও চলতি ২০২০ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে, বিশেষ করে দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ান অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার (ওইসিডি) প্রবৃদ্ধির হারকে ছাড়িয়ে গেছে। এসব দেশের প্রযুক্তি খাতে প্রচুর মেধাবী কর্মী যেমন পাওয়া যায় তেমনি শিল্প ও শিক্ষা খাতের মধ্যে ব্যাপকভাবে সক্রিয় আরঅ্যান্ডডি কোলাবোরেশন বা যৌথ উদ্যোগও রয়েছে। ডিজিটাল প্রডাক্ট বা প্রযুক্তি পণ্য উদ্ভাবন ও তা মূলধারায় সরবরাহের ক্ষেত্রেও এসব দেশের রেকর্ড ভালো।

এ প্রসঙ্গে টাফটস ইউনিভার্সিটির দ্য ফ্লেচার স্কুলের গ্লোবাল বিজনেস অনুষদের ডিন ভাস্কর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বিশ্বে ডিজিটাইলাইজেশন বা প্রযুক্তির প্রচলন বাড়ানোর জন্য চলমান মহামারিই সম্ভবত একটি সত্যিকারের পরীক্ষা। ডাইনামিক ডিজিটাল ইকোনমিজ বা প্রযুক্তিভিত্তিক অর্থনীতিতে গতিশীল হয়ে ওঠা দেশগুলো কীভাবে নজিরবিহীন অনিশ্চয়তার পরিস্থিতিতে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তুলতে পারে এবং তাদের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও পরিবর্তন ত্বরান্বিত হতে পারে সেই সম্পর্কে আমাদের ধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গি এখন পরিষ্কার। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ অনলাইন সেবার আওতায় রয়েছে। আমরা এখন ‘আফটার অ্যাকসেস’ বা ডিজিটাল সুবিধা পাওয়ার পরবর্তী ধাপে প্রবেশ করছি, যেখানে নিছক সুবিধা পাওয়াটাই যথেষ্ট নয়। এখন ডিজিটাল কমপিটিটিভনেস বা প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতাশীলতা ও প্রযুক্তির ব্যবহারকে টেকসই করে তোলার জন্য মানসম্পন্ন ডিজিটাল সুযোগ-সুবিধা, প্রযুক্তির কার্যকর ব্যবহার, দায়বদ্ধ বা জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠান স্থাপন, তথ্য-উপাত্ত সংক্রান্ত বলিষ্ঠ নীতিমালা এবং আস্থা সৃষ্টি এগুলো নিশ্চিত করতে হবে। উদীয়মান অর্থনীতিগুলোতে তরুণ প্রজন্ম ব্যাপকভাবে প্রযুক্তির প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে এবং এটি ব্যবহারে ঝুঁকছে। এর ফলে সরকারগুলোকে অর্থনীতিতে ডিজিটালাইজেশন বা প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর উজ্জ্বল সম্ভাবনা কাজে লাগানোর চেষ্টা করতে হবে। ’’
মাস্টারকার্ডের সাইবার অ্যান্ড ইন্টিলিজেন্স বিভাগের প্রেসিডেন্ট অজয় ভাল্লা বলেন, ‘‘এর আগে কখনোই ডিজিটালাইজেশন বা প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো এবং প্রযুক্তির প্রতি আস্থা স্থাপনে মানুষকে আকৃষ্ট করে তোলার এতটা প্রয়োজনীয়তা দেখা যায়নি। তাই প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাওয়া দেশগুলো যে অমিত সম্ভাবনার পথ দেখিয়েছে সে আলোকে বিশ্বজুড়ে সরকার ও ব্যবসা খাত একযোগে কাজ করতে পারে, যাতে দুনিয়ার ৭ দশমিক ৬ বিলিয়ন বা ৭৬০ কোটি মানুষ উপকৃত হয়। আজও অনেক কিছুই অনিশ্চিত- এমন পরিস্থিতিতে যে বিষয়টি পরিষ্কার সেটি হলো, ডিজিটাল সাকসেস বা প্রযুক্তিগত সফলতাই হতে পারে আমাদের সম্মিলিত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের মূল স্তম্ভ। ’’

মাস্টারকার্ডের এশিয়া প্যাসিফিকের সার্ভিসেস বিভাগের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ম্যাথিউ ড্রাইভার বলেন, ‘‘ করোনার মাত্র কয়েক মাসে ডিজিটাল ইকোসিস্টেমের উন্নয়ন ঘটিয়ে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসগারীয় অঞ্চল জুড়ে ডিজিটালাইজেশন বা প্রযুক্তির প্রচলন ও ব্যবহারকে অন্তত পাঁচ বছর এগিয়ে দিয়েছে। ভোক্তাদের প্রবল আস্থা বা নির্ভরতা ও সম্পৃক্ত হওয়ার সুবাদে ক্ষুদ্র ব্যবসায়েও প্রযুক্তির ব্যবহার ব্যাপকহারে বেড়েছে। এক্ষেত্রে সরকারগুলো সক্রিয় সহায়তা দিয়েছে। বদৌলতে এ অঞ্চলে ডিজিটাল ইকোনমি বা প্রযুক্তি-অর্থনীতির অমিত সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলো চলমান মহামারি মোকাবিলা করে দ্রুত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। এক্ষেত্রে কেবল ডিজিটাল ইভলিউশন প্রযুক্তির বিকাশ ও ডিজিটাল ট্রাস্ট বা প্রযুক্তির প্রতি আস্থা বাড়া এশিয়া-প্যাসিফিকের নেতাদের জন্য সহায়ক হতে পারে। ’’