‘নিঃস্ব’ব্যবসায়ীদের রেস্তোরাঁ খুলে দেয়ার দাবি

ঈদ পরবর্তী কঠোর বিধিনিশেধের শেষ দিন ৫ আগস্টের পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে, হোটেল-রেস্তোরাঁ স্বাভাবিক নিয়মে খোলা রাখতে চান বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি(বিআরওএ)। যদি তা সম্ভব না হয়, অন্তত অর্ধেক আসনে বসিয়ে হোটেল-রেস্তোরাঁ চালুর দাবি জানিয়েছেন তারা। চলমান পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে হোটেল-রেস্তোরাঁ খুলে দেয়ার দাবির পাশাপাশি অন্যান্য প্রস্তাবনা তুলে ধরেছেন। সংগঠনটির পক্ষে দাবি করা হয়েছে, চলমান লকডাউনে তাদের ৮০ থেকে ৯০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

‘নিঃস্ব’ব্যবসায়ীদের রেস্তোরাঁ খুলে দেয়ার দাবি

ঈদ পরবর্তী কঠোর বিধিনিশেধের শেষ দিন ৫ আগস্টের পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে, হোটেল-রেস্তোরাঁ স্বাভাবিক নিয়মে খোলা রাখতে চান বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি(বিআরওএ)। যদি তা সম্ভব না হয়, অন্তত অর্ধেক আসনে বসিয়ে হোটেল-রেস্তোরাঁ চালুর দাবি জানিয়েছেন তারা। চলমান পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে হোটেল-রেস্তোরাঁ খুলে দেয়ার দাবির পাশাপাশি অন্যান্য প্রস্তাবনা তুলে ধরেছেন। সংগঠনটির পক্ষে দাবি করা হয়েছে, চলমান লকডাউনে তাদের ৮০ থেকে ৯০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। 

সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির মহাসচিব ইমরান হাসান এই দাবি করেন। এসময় লাবেঞ্জির মালিক তৌফিকুল ইসলাম, আলকাদেরিয়ার চেয়ারম্যান ফিরোজ আলম সুমন, ব্রুকলির আফছার আলী, নবাবী ভোজের বিপু চৌধুরীসহ অনান্য মালিকরাও উপস্থিত ছিলেন।

ইমরান হাসান বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে, হোটেল রেস্তোরাঁ, ‘স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী খোলা রাখতে চাই।  যদি সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে ৫০ ভাগ আসনে বসিয়ে হোটেল, রেস্তোরাঁ চালু করতে চাই।’ সরকারি সহায়তার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র তৈরি পোশাক খাত দেশের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেনি। হোটেল, রেস্তোরাঁ খাত তাদের পর্যায়ে অবদান রাখলেও এই খাতে কোনো সহযোগিতা বা প্রণোদনা দেওয়া হয়নি।  আমাদের দাবি সহজ শর্তে, স্বল্প সুদে জামানতবিহীন এবং দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দিতে এই খাতে ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের দাবি জানাচ্ছি।’

রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি পক্ষ থেকে জানানো হয়, সারাদেশে ৬০ হাজার রেস্তোরাঁয় ৩০ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং প্রায় দুই কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে। তারা এখন মানবেতর জীবন-যাপন করছে। সারাদেশে শতকরা ৮০ ভাগ রেস্তোরাঁ বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে টেকওয়ে, পার্সেল ও অনলাইন ডেলিভারি করছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা মাত্র ২ থেকে ৩ শতাংশ। ইমরান হাসান বলেন, ‘বর্তমানে শুধু অনলাইন ডেলিভারির সুযোগ দিয়ে রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখার ঘোষণাটি দুরভিসন্ধিমূলক। এতে দেশীয় ব্যবসায়ীদের কোনঠাসা করা হচ্ছে। এখানে দেশি-বিদেশি স্বার্থান্বেষী মহলের হাত রয়েছে। যারা টেকওয়ে ব্যবসা জনপ্রিয় করতে চাচ্ছে। তাদের হাতে ব্যবসা নিতে চাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে টেলিফোন আসছে। আমাদের বাঁচান।  আমরা এ ব্যবসায় টিকে থাকতে পারলাম না। এমন কথা সর্বদা উচ্চারিত হচ্ছে, যা আমাদের কষ্ট দেয়।  রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকা সংশ্লিষ্ট মালিকপক্ষ ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হৃদয়বিদারক কষ্ট করছেন, যা ভাষায় বুঝানো সম্ভব নয়।’ 

লকডাউন ও করোনাকালীন হোটেল, রেস্তোরাঁর ব্যবসা পরিস্থিতি সম্পর্কে জানানো হয়েছে, করোনার প্রথম ঢেউয়ে এই খাতের ৩০ শতাংশ ব্যবসায়ী দেউলিয়া হয়ে গেছেন। এই সময়ে ক্ষতি হয়েছে ৬০ হাজার কোটি টাকা। এখন দ্বিতীয় ঢেউয়ে ৮০ শতাংশ হোটেল, রেস্তোরাঁ বন্ধ রয়েছে। এই সময়ে ক্ষতির পরিমাণ ও ব্যবসা ছেড়ে যাওয়ার সংখ্যা পাওয়া যায়নি।  তবে এর পরিমাণ প্রথম থেকে দ্বিগুণ হবে বলে ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন।

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, জাতীয় রাজস্ব খাতে রেস্তোরাঁ খাতের ব্যাপক অংশীদারত্ব ও পর্যটন শিল্পের প্রধান নিয়ামক শক্তি হওয়া সত্ত্বেও একে শিল্পের মর্যাদা দেয়া হয় না। ব্যাবসায়ীরা অভিযোগ করেন, ইএফডি মেশিন স্থাপন এবং তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ভ্যাট আদায়ে হয়রানি চলছে। পচনশীল (পেরিশেবল) পণ্য বিক্রি করার ক্ষেত্রে ঋণ দেয়া যাবে না বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ রয়েছে। তাই কোনো ব্যাংক হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতে ঋণ দিচ্ছে না।

সংবাদ সম্মেলনে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি বেশ কিছু প্রস্তাব করে।

১. স্বাস্থ্যবিধি মেনে হোটেল, রেস্তোরাঁ স্বাভাবিক নিয়মে চালু রাখা। তাও সম্ভব না হলে ৫০ শতাংশ আসনে বসিয়ে হোটেল-রেস্তোরাঁ চালুর সুযোগ দেয়া।

২. এ ব্যবসাকে চলমান রাখার জন্য চলতি মূলধন হিসেবে এসএমই খাত থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের মাধ্যমে সহজ শর্তে, স্বল্প সুদে জামানতবিহীন এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেয়া।

৩. রেস্তোরাঁ সেবা খাত। এ জন্য হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিক-শ্রমিকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনার টিকা দেয়া।

৪. এ খাতে কর্মরত শ্রমিকদের প্রণোদনা প্রদান। শ্রমিকদের মোবাইলের মাধ্যমে অর্থ অথবা নির্দিষ্ট কার্ড দেয়ার মাধ্যমে মাসিকভাবে খাদ্য সাহায্য দেয়া।

৫. হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতকে একাধিক মন্ত্রণালয়ের অধীনে না রেখে একটি নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে শিল্পের মর্যাদা দেয়া ও মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করা।

৬. টেকওয়ে, পার্সেল ও অনলাইন ডেলিভারির ক্ষেত্রে বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ কমিশন করা ও একটি সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়ন করে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা।

বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির (বিআরওএ) তথ্য বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে ৭০ থেকে ৮০ হাজার রেস্তোরাঁ রয়েছে। এতে কাজ করছেন প্রায় ৩০ লাখের মতো শ্রমিক-কর্মচারী। এর মধ্যে রাজধানীতে আছে প্রায় ৮ হাজার রেস্তোরাঁ। ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় আছে সাড়ে চার হাজার। উত্তর সিটিতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার। এসব রেস্তোরাঁয় সব মিলিয়ে প্রায় আড়াই লাখ শ্রমিক কাজ করেন।