বিমানবন্দর-শুল্ক স্টেশনে আধুনিক ব্যাগেজ স্ক্যানার আসছে

সারাদেশের বিমানবন্দর ও শুল্ক স্টেশন গুলোতে চোরাচালান প্রতিরোধ এবং আমদানি-রফতানিতে আরো স্বচ্ছতা আনার উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

বিমানবন্দর-শুল্ক স্টেশনে আধুনিক ব্যাগেজ স্ক্যানার আসছে

সারাদেশের বিমানবন্দর ও শুল্ক স্টেশন গুলোতে চোরাচালান প্রতিরোধ এবং আমদানি-রফতানিতে আরো স্বচ্ছতা আনার উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

ওই লক্ষ্যে দেশের দুটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং ১০টি শুল্ক স্টেশনে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যাগেজ স্ক্যানার বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কারণ সাম্প্রতিক বছরগুলোয় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ অন্যান্য বিমানবন্দরে স্বর্ণ চোরাচালানের বড় বড় ঘটনা ধরা পড়েছে।

পাশাপাশি দেশের স্থল শুল্ক স্টেশনগুলোয়ও চোরাচালানের ঘটনা ঘটছে। মূলত বিমানবন্দর ও শুল্ক স্টেশনে যাত্রী সংখ্যা, প্রয়োজনীয়তা, স্ক্যানার স্থাপনযোগ্য ভবন, অবকাঠামো সুবিধা প্রভৃতি বিবেচনার ভিত্তিতেই ওসব স্ক্যানার স্থাপন করা হবে। এনবিআর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিমানবন্দর ও শুল্ক স্টেশনে ব্যাগেজ স্ক্যানার স্থাপনের স্থান নির্ধারণ বিষয়ে ইতিমধ্যে এনবিআর অভ্যন্তরীণ বৈঠক করেছে। ওই বৈঠকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আধুনিক ব্যাগেজ স্ক্যানার স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একই সঙ্গে সিলেট কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের আওতাভুক্ত তামাবিল স্থল কাস্টম স্টেশন; কুমিল্লা কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের আওতাভুক্ত আখাউড়া স্থল কাস্টমস স্টেশন; যশোর কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের আওতাভুক্ত দর্শনা (জয়নগর) স্থল কাস্টম স্টেশন; রাজশাহী কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের আওতাভুক্ত সোনামসজিদ স্থল কাস্টমস স্টেশন; খুলনা কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের আওতাভুক্ত ভোমরা স্থল কাস্টমস স্টেশন এবং রংপুর কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের আওতাভুক্ত হিলি, বুড়িমারী ও বাংলাবান্ধা স্থল কাস্টমস স্টেশনে একটি করে আধুনিক ব্যাগেজ স্ক্যানার স্থাপন করা হবে।

সূত্র জানায়, এনবিআর ১০টি ব্যাগেজ স্ক্যানার কেনার পাশাপাশি একটি হিউম্যান বডি স্ক্যানার কেনার বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে হিউম্যান বডি স্ক্যানার কেনার ক্ষেত্রে দপ্তরগুলোর সাংগঠনিক কাঠামোয় (টিওঅ্যান্ডই) উল্লেখ না থাকায় একটির বেশি বডি স্ক্যানার কেনার উদ্যোগ নেয়া যায়নি। ইতিমধ্যে ওসব স্ক্যানার কেনার জন্য পত্রিকায় টেন্ডার বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশিত হয়েছে। ক্রয় প্রক্রিয়াধীন একটি হিউম্যান বডি স্ক্যানার (যা কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, রাজশাহীর টিওঅ্যান্ডইভুক্ত) প্রয়োজন ও অগ্রাধিকার বিবেচনায় অর্থমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্থাপন করা হবে। তবে ঢাকা কাস্টম হাউজ তাদের টিওঅ্যান্ডইতে হিউম্যান বডি স্ক্যানার অন্তর্ভুক্তির পর ক্রয় ও স্থাপন সাপেক্ষে বডি স্ক্যানারটি রাজশাহী কমিশনারেটকে ফেরত দিতে হবে।

সূত্র আরো জানায়, স্ক্যানার ব্যবহারের ফলে বিমানবন্দর ও শুল্ক স্টেশনে অবৈধ পণ্য সহজে শনাক্ত করা যাবে। একই সঙ্গে শুল্ক ফাঁকিও কমবে। স্ক্যানার মেশিন বসানো হলে কমে আসবে চোরাচালানও এবং লাগেজ ব্যবসায়ীদেরও নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে। তাছাড়া দ্রুত সময়ের মধ্যে কাস্টসম প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। তাতে বন্দরের পণ্য আমদানি-রফতানি ব্যবস্থায় আরো গতিশীলতা আসবে।

এদিকে দেশের অন্যতম স্থল শুল্ক স্টেশন সাতক্ষীরার ভোমরা। বন্দরটি দিয়ে ভারত থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পণ্য রফতানি হয়। তবে এখন পর্যন্ত সেখানে স্ক্যানার স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। যদিও ভোমরা শুল্ক স্টেশনের সহকারী বিভাগীয় কমিশনার আমির মামুনের মতে, সেজন্য তেমন কোনো সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না। তবে ভোমরায় ব্যাগেজ স্ক্যানার আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু স্ক্যানারটি আসতে কিছুটা সময় লাগবে। ইতিমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ স্ক্যানার স্থাপনের জায়গা দেখে গেছে। স্ক্যানার থাকলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রক্রিয়াটি দ্রুত হয়। কোন ব্যাগের ভেতরে কী আছে তা দ্রুত দেখে ফেলা যায়। তবে এ মুহূর্তে স্ক্যানার না থাকায় এখন পর্যন্ত তেমন কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। কারণ এ বন্দর দিয়ে সীমিত পরিসরে পণ্য আসে। তবে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে স্ক্যানার নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

অন্যদিকে বুড়িমারী স্থল শুল্ক স্টেশনের সহকারী কমিশনার কেফায়েত উল্লাহ জানান, দেশের এ সীমান্ত দিয়ে ভারত, নেপাল ও ভুটানের যাত্রীর চাপ অনেক বেশি থাকে। ব্যাগেজ স্ক্যানার না থাকার কারণে প্রতিটি ব্যাগ ধরে ধরে চেক করতে হয়। আর তা অনেক সময়সাপেক্ষ। তবে সম্প্রতি বুড়িমারীসহ মোট ১০টি শুল্ক স্টেশনে স্ক্যানার বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলে এখানকার কাস্টমস প্রক্রিয়া মসৃণভাবে সম্পন্ন করা যাবে।

প্রকৌশল নিউজ/এমআরএস