মফস্বলের মেয়ে আজব শহরে ১০ বছর!

মফস্বলের মেয়ে আজব শহরে ১০ বছর!

আমিও মফস্বলের মেয়। এক বুক স্বপ্ন নিয়ে এই ইট কাঠের আজব শহরে এসেছিলাম ১০ বছর আগে। বেঁচে থাকার লড়াইটা আমার আরও আগেই শুরু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এই শহরে আশার পর লড়াইটা পাল্টে গেল। কঠিন প্রতিকুলতায় বেঁচে থাকার যুদ্ধ কেমন হয় আমি জানি। সেই শক্তি, সাহস, পরিশ্রম এবং বুদ্ধি বোধ হয় আমার আছে বলেই আবেগহীন শহরে এখনো বেঁচে আছি। এই পরিক্ষায় বোধহয় পাশ করে গেছি। কিন্তু .........

আমার কাছে মনে হয় এই শহরের বেশির ভাগ মানুষ ভালবেসে ভাল রাখতে জানে না। আসলে ভালরাখার সময় কোথায়? দুজন মানুষ একসাথে হলে কথা বলারও বা সময় কোথায়? যন্ত্রের সাথে যান্ত্রিক না হয়ে আবেগি হবার সময় কোথায়? কথা দেবার পর সেই কথা রাখার আবার সময় কোথায়? এত এত ভালবাসার মানুষ থাকতে একজনকেই সব কিছু উজাড় করে ভালবাসার সময় কোথায়? একজনকেই কেন ভালবাসতে হবে অন্যরা কি মানুষ না ? যারা গ্রাম থেকে এসে এই শহরের মানুষদের ভেজে খেয়েও ভালবাসাটাই খোজে তারাও কি মানুষ না?

নাকি যারা এই শহরের হাওয়া খেয়েই বয়সের আগেই নিজেরাই ভাজা কটকটি হয়ে যায়, তাঁরাই শুধু শহরের মানুষের ভালবাসা ডিজার্ভ করে? নাকি এই শহরকে আপন করে নেবার ছলে নিজেকে আপন ভাবতেই ভুলে যায় সবাই? নিজেকে ভালবাসতে ভুলে যায় ?

মফস্বলের মেয়েদের কি শুধু এই একটাই ধান্দা হয় কিভাবে ঢাকা শহরে আসবে এসে একটা বড়লোক পটিয়ে বিদেশ গিয়ে সংসার করবে? তারা কি ভাল একটুও বাসে না ? 

আর শহরের মানুষরাই বা কেন ভুলে যায় , where she came from? নাকি জেনে শুনেই ........? 

তাহলে মরে  কিসের কষ্টে এরা ? 
পটায়া বিয়ে করে বিদেশ যাইতে না পারার কষ্টে ? 
 নাকি, বিশ্বাস, হৃদয়, মন, আত্ববিশ্বাস, ভালবাসা ভাঙ্গার কষ্টে? 
আজব শহর, মনে হয় কথা দিয়ে কথা রাখে না। আবার ভিষন মায়ায় বেঁধে রাখে। কিন্তু মায়া করে না। এই শহর যা দেয় তার বহুগুন উসুল করে নেয়।

আমরা বোধহয় এমনই, যে মায়া করে না তারপিছেই ছুটি। 
তাই মরার ভয় থাকার পরও এই শহরেই ছুটে আসে সব উই পোকার মত। মরেও। দোষ ও হয় ।

আসলেই জাদুর শহর। এক যুদ্ধ জিতিয়ে দিয়ে লোভি বানিয়ে দেয়। আসল যুদ্ধে হারিয়ে দিতে চায় বার বার।
দিয়ে আবার সব কিছু কেড়ে নিয়ে এমন কি প্রানটাও কেড়ে নিয়ে নিঃস্ব করে দিতে চায় । 

ইদানিং এই শহরে শ্বাস নিতে আমার বড্ড কষ্ট হয়।
শুনেছি মহাপুরুষদের আবেগ থাকে না। এই গোটা শহরটাকেই আমার মাঝে মাঝে মহাপুরুষ মনে হয়। 

বোধহয় আবেগহীন হয়ে যাওয়াটাই সব চেয়ে বড় যুদ্ধ এই শহরের।

       
মৌসুমি হামিদ (মডেল ও অভিনেত্রী)