মাসে ৬৪ হাজার ৭৭৬ টাকা পাওয়া যাবে সর্বজনীন পেনশন ব‍্যবস্থায়

১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী বাংলাদেশি নাগরিকের জন্য সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে সরকার। এটি প্রবর্তন হলে ১৮ বছর বয়সী একজন নাগরিক যদি মাসে ১ হাজার টাকা করে চাঁদা দেয় এবং ৬০ বছর বয়স পযর্ন্ত চলমান রাখে তাহলে অবসরের পর প্রতি মাসে সে ৬৪ হাজার ৭৭৬ টাকা করে পেনশন পাবেন। যদি ৩০ বছর বয়সে চাঁদা দেওয়া শুরু করেন এবং তা ৬০ বছর পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখে, তাহলে অবসরের পর প্রতি মাসে ১৮ হাজার ৯০৮ টাকা করে পেনশন পাবেন বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। আগামী ৬ মাস থেকে এক বছরের মধ্যেই ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী বাংলাদেশি নাগরিকের জন্য সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে সরকার বলেও জানান তিনি।

মাসে ৬৪ হাজার ৭৭৬ টাকা পাওয়া যাবে সর্বজনীন পেনশন ব‍্যবস্থায়

১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী বাংলাদেশি নাগরিকের জন্য সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে সরকার। এটি প্রবর্তন হলে ১৮ বছর বয়সী একজন নাগরিক যদি মাসে ১ হাজার টাকা করে চাঁদা দেয় এবং ৬০ বছর বয়স পযর্ন্ত চলমান রাখে তাহলে অবসরের পর প্রতি মাসে সে ৬৪ হাজার ৭৭৬ টাকা করে পেনশন পাবেন।

যদি ৩০ বছর বয়সে চাঁদা দেওয়া শুরু করেন এবং তা ৬০ বছর পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখে, তাহলে অবসরের পর প্রতি মাসে ১৮ হাজার ৯০৮ টাকা করে পেনশন পাবেন বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। আগামী ৬ মাস থেকে এক বছরের মধ্যেই ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী বাংলাদেশি নাগরিকের জন্য সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে সরকার বলেও জানান তিনি। 

বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ও অর্থনৈতিক বিষয়ক সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে ভার্চ্যুয়ালি সাংবাদিকদের এ কথা জানান অর্থমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আপনারা জানেন বাংলাদেশের অনেক অর্জন সেই অর্জনের সাথে আজকে যুক্ত হলো আরও একটি অর্জন। সেটা হলো সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা। এই পেনশন ব্যবস্থা সবার জন্য।

মুস্তফা কামাল বলেন, পেনশন ব্যবস্থাটি আমাদের সংবিধানের ১৫ অনুচ্ছেদে বলা আছে বাধ্যর্কজনিত কারণে যারা অভাবগ্রস্ত হবে। এই অভাবগ্রস্তদের জন্য সাহায্যের প্রয়োজন হবে। এই সাহায্য লাভের অধিকার রাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার। বাধ্যর্কজনিত কারণে যে সমস্ত অভাব আসতে পারে বা আসে জীবনে, সে সমস্ত অভাবগ্রস্ত নাগরিকরা পেনশন পাবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকার ২০০৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বয়স্কদের টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় মৃত্যুকালীন সুরক্ষা নিশ্চিতের লক্ষ্যে দেশে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছিলেন। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাজেটে আনা হয়েছিল যে, এটা আমরা বাস্তবায়ন করবো। তার ধারাবাহিকতায় আমরা এখন এটা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। এটা বাস্তবায়ন হলে দেশের প্রত্যেকটি মানুষ লাভবান হবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষের আয়ুকাল ৭৩ বছর। ২০৫০ সালে সেটা হবে ৮০ বছর। ২০৭৫ সালে আমাদের প্রাককলনে দেখানো হয়েছে, আমাদের আয়ুকাল হবে ৮৫ বছর। এতে দেখা যায় আগামী ৩ দশকে মানুষ অবসর গ্রহণের পরেও আরও ২০ বছর তার আয়ু থাকবে। সে সময়ে তার আয় থাকবে না, কিন্তু তিনি বেঁচে থাকবেন। তাই তাদের দেখভালের জন্য কারো না কারো দ্বায়িত্ব নিতে হবে। সরকার সে দ্বায়িত্বটা নেবে।

তিনি বলেন, পেনশন ব্যবস্থা নিয়ে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আরও বিস্তারিত আপনাদের কাছে শেয়ার করবো। পর্যায়ক্রমে আমরা বাস্তবায়নে যাবো। এখানে কিছু সংযোজন বিয়োজন আরও অনেক জায়গায় হবে। কিন্তু আমাদের মৌলিক ধারণাগুলো আজ তুলে ধরছি। ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সব নাগরিক সর্বজনিত পেনশন ব্যবস্থায় অংশ নিতে পারবেন। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীরাও এ ব্যবস্থায় অংশ নিতে পারবেন। সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিষয়টি আমরা পরে বিবেচনা করবো। জাতীয় পরিচয়পত্রের ওপর ভিত্তি করে দেশের ১৮ থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত সব নাগরিক পেনশনের হিসাব খুলতে পারবেন। প্রাথমিকভাবে এই পদ্ধতি স্বেচ্ছাধীন থাকবে। পরবর্তীতে এটাকে পর্যায়ক্রমে বাধ্যতামূলক করা হবে।

তিনি বলেন, কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদাদানের মধ্যমে মাসিক পেনশন ব্যবস্থা চালু করা হবে। প্রতিটি নাগরিকের জন্য একটি পেনশন অ্যাকাউন্ট থাকবে। ফলে চাকরি পরিবর্তন করলেও পেনশন হিসাব অপরিবর্তিত থাকবে। মাসিক সর্বনিন্ম চাঁদা নির্ধারিত থাকবে। তবে প্রবাসীরা ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে চাঁদা দিতে পারবেন। চাঁদা জমা দিতে ব্যর্থ হলে হিসাব সাময়িক বন্ধ থাকবে। পরবর্তীতে জরিমানাসহ বকেয়া দিয়ে হিসাব চালু করতে পারবেন। পেনশনের জন্য নির্ধারিত সময়সীমা ৬০ বছর পূর্তিতে নির্ধারিত হারে তহবিল থেকে আসবে। পেনশনধারীরা আজীবন মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন। নির্ধারিত চাঁদা দানকারী ৭৫ বছর হওয়ার পূর্বে মৃত্যুবরণ করলে জমাকারীর নমিনি পেনশন পাবেন ৭৫ বছর পর্যন্ত।

অর্থমন্ত্রী বলেন, জমাকারীর অবর্তমানে এককালীন টাকা তোলার কোনো সুযোগ থাকবে না। তবে আবেদনের প্রেক্ষিতে পেনশনের ৫০ ভাগ ঋণ হিসেবে উত্তোলন করা যাবে। কোনো জমাকারী ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার পর যদি মৃত্যুবরণ করেন তাহলে জমাকৃত অর্থ তার নমিনিকে ফেরত দেওয়া হবে। পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা পরে আলোচনা করে নির্ধারণ করা হবে। পেনশন কর্তৃপক্ষসহ অন্যান্য ব্যয় সরকার নির্বাহ করবে। কর্তৃপক্ষ বাজেটে নির্ধারিত টাকা তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যয় করবেন। এভাবেই আমরা প্রস্তাবনা ঠিক করেছি। আরও প্রস্তাবনা আসবে এবং সেটা বিবেচিত হবে। এটা বাস্তবায়ন করা গেলে সবাই লাভবান হবে। শেষ বয়সে যখন কেউ দেখার থাকবে না তখন এই পেনশন ব্যবস্থা কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে বলে।

সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা কবে থেকে চালু হবে জানতে চাইলে মুস্তফা কামাল বলেন, আশা করি, আগামী ৬ মাস থেকে এক বছরের মধ্যে চালু হবে।

পাইলট বেসিসে হবে কিনা জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, পাইলট না, এখন আমরা সবার মতামত নিয়ে বিধিমালা, আইন একসাথেই প্রণয়ন করবো এবং বাস্তবায়নে যাবো। এরপর যদি প্রয়োজন হয় বাস্তবায়ন চলাকালীন সময়ে সেটা তখন দেখা যাবে।

একজন পেনশনভোগী সর্বনিন্ম কত টাকা পেতে পারেন তার একটি অনুমানভিত্তিক হিসাব দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়েছে- যদি মাসিক চাঁদা ১০০০ টাকা, মুনাফা ১০% ও আনুতোষিক ৮ শতাংশ ধরা হয় তাহলে ১৮ বছর বয়সে যদি কেউ চাঁদা প্রদান শুরু করে এবং ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত তা চালু থাকে তাহলে উক্ত ব্যক্তি অবসরের পর ৮০ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতি মাসে ৬৪,৭৭৬ টাকা পেনশন পাবেন। যদি ৩০ বছর বয়সে চাঁদা প্রদান শুরু করেন এবং ৬০ বছর পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে তাহলে অবসরের পর প্রতিমাসে ১৮,৯০৮ টাকা পেনশন পাবেন। তবে চাঁদার পরিমাণ ১০০০ টাকার বেশি হলে আনুপাতিক হারে পেনশনের পরিমাণও বেশি হবে। এ হিসাব একটি আনুমানিক হিসাব। প্রকৃত অবস্থা আইন ও বিধি প্রণয়ন এবং পেনশন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার পর বিস্তারিত জানা যাবে।