মোহাম্মদপুরে কিশোর গ্যাংয়ের তান্ডব, নিরব ভূমিকায় পুলিশ

শনিবার (০৮ মে) রাত ৮টায় মোহাম্মদপুরের হক সাহেবের গ্যারেজ সংলগ্ন রিং রোড এলাকায় ঘটে এ ঘটনা।

মোহাম্মদপুরে কিশোর গ্যাংয়ের তান্ডব, নিরব ভূমিকায় পুলিশ

শত শত মানুষের চোখের সামনে ছিনতাই করছিলো ২০-২৫ জন কিশোর। ছিনতাইয়ের কবল থেকে ভুক্তভোগীকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন মো. নয়ন (২৫)। প্রতিবাদই যেন কাল হয়ে দাড়ায় তার। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা রড, লাঠি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে নয়নের ওপর। টানা ৫ মিনিটের তান্ডবে ফেটে যায় নয়নের মাথা, আঘাত লাগে শরীরের বিভিন্নস্থানে। তাদের হামলায় শুধু নয়নই নয়, আহত হন কমপক্ষে আরো ৬ জন।

শনিবার (০৮ মে) রাত ৮টায় মোহাম্মদপুরের হক সাহেবের গ্যারেজ সংলগ্ন  রিং রোড এলাকায় ঘটে এ ঘটনা।

আহত অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার নয়নের দাবি, রাত ৮টায় জনসম্মুখেই মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এসময় উপস্থিত থাকা হকার ও স্থানীয় জনতা কিশোর গ্যাংয়ের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। কিশোর গ্যাং সদস্যরা ছিনতাইয়ে বাঁধা পেয়ে চড়াও হয় উপস্থিত থাকা জনতার ওপর। এসময় বারবার মোহাম্মদপুর খানার অফিসার ইনচার্জকে (ওসি) ফোন করে সাহায্য চাওয়া হলেও চলমান রোজার মাসে পুলিশের অতিরিক্ত ব্যস্ততার কারণ দেখিয়ে নীরব ভূমিকা পালন করেন।

প্রায় মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে আসা নয়নের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। ভীত সম্ভ্রস্ত নয়নের কন্ঠে আতঙ্ক ফুটে ওঠে। নয়ন বলেন, “ছিনতাইয়ের হাত থেকে ভুক্তভোগীকে বাঁচানো গেলেও গ্যাংয়ের সদস্যরা আমার ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। এসময় যারা আমাকে বাঁচাতে আসেন তারাই মারধর, হামলার শিকার হয়েছেন। প্রায় দুই ঘন্টা ধরে তারা লাঠি, রড, ছুড়ি নিয়ে এলাকায় অবস্থান করে।”

                        কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত মো. নয়ন

শুধু তাই নয়, এ ঘটনায় যারাই প্রতিবাদ করেছেন তাদের কপালেই নেমে আসে আঘাত। নয়নকে মারধরের পরা ভ্রাম্যমান ১০জন হকারের মালামাল লুট করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। লুটের শিকার ভ্রাম্যমান চশমা বিক্রেতা মো. রাজু এই প্রতিবেদককে বলেন, “হামলার সময় জীবন বাঁচাতে ঘটনাস্থল থেকে কিছুক্ষণ সরে থাকি। এরইমধ্যে তারা আমার দোকান থেকে প্রায় শতাধিক চশমা লুট করে।”

আলী নামের আরেক হকারও জানান একই ঘটনা। তার ভ্যান থেকে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা ২০টির বেশি শার্ট নিয়ে পালিয়ে যায়।

ঘটনার প্রতক্ষদর্শী বাবুল মিয়া জানান, এরকম ঘটনা প্রায়শই ঘটে। কিন্ত প্রশাসনের নিরব ভূমিকার কারণে প্রতিদিনই কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত বেড়ে চলছে। কেউ কোন প্রতিবাদ করলে তার ওপরে নেমে আসে আঘাত।

প্রকৌশল নিউজের অনুসন্ধানে জানা গেছে, শুধু মোহাম্মদপুরেই রয়েছে ২০টির বেশি কিশোর গ্যাং। মোহাম্মদপুরের জহুরি মহল্লার বস্তিতেই রয়েছে কমপক্ষে ৩টি কিশোর গ্যাং। টিক্কা পাড়া, বাবর রোড, হুমায়ুন রোড, শিয়া মসজিদ, টাউন হল, ঢাকা উদ্যান ও বেড়িবাধে রয়েছে প্রায় আরো ১৭টি কিশোর গ্যাং। তাদের উৎপাতে পুলিশের নিরব ভূমিকা চোখে পড়ার মতো।

কারণ হিসেবে জানা গেছে, এই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা পরোক্ষভাবে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয় না কোন ব্যবস্থা। উল্টো ভুক্তভোগীকে পোহাতে হয় ভোগান্তী। অনুসন্ধান জানা গেছে, চলতি মে মাসেই শ্যামলীতে এধরণের ছিনতাইয়ের ঘটনা ৩বারের বেশি ঘটেছে। পুলিশকে জানানো হলেও কোন ধরণের সহায়তা মেলেনি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে জানতে মোহাম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল লতিফের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, “একজন ফোন করে আমাকে এই বিষয়টা সম্পর্কে জানিয়েছিল। পুলিশও গিয়েছিলো ঘটনাস্থলে। তবে আমার অফিসার ঘটনাস্থলে গিয়ে কাউকে পায়নি। কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ করেনি, তাই কাউকে আটকও করা হয়নি।

ফোন দেবার এক ঘন্টা পরেও নাকি কোন পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়নি, কিন্তু কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “না, এমন কিছু হয়নি। কেউ ফোন করলেই তাৎক্ষনিকভাবে পুলিশ যায়। হয়তো অনেক সময় ডিউটি বদলির সময় থাকে। ৮টার সময় থাকে বদলির সময়। হয়তো এজন্য একটু দেরি হতে পারে।”

বর্তমান সময়ে মোহাম্মদপুর এলাকায় কিশোর গ্যাং এর তৎপরতা কেমন এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এখন মোহাম্মদপুরে কিশোর গ্যাংয়ের ওরকম তৎপরতা নেই। আমরা অনেককেই এর আগে ধরেছি এবং তাদের বিরুদ্ধে তাদের বয়স অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি। যেহেতু তারা কিশোর বয়সের। সেই সাথে আমাদের মোবাইল টিমও সব সময় তৎপর রয়েছে এই বিষয়ে।”

উল্লেখ্য, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম গত বছরের ১৮ অক্টোবর অপরাধ পরিস্থিতি সম্পর্কিত মাসিক পর্যালোচনা বৈঠকে রাজধানীতে কিশোর গ্যাংগুলোর বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে পুলিশ সদস্যদের নির্দেশ দেন।

তিনি ডিএমপির অপরাধ বিভাগকে সতকর্তার সঙ্গে বিষয়টি দেখতে বলেছিলেন। পাশাপাশি, তিনি পুলিশ সদস্যদের আরও বলেছিলেন, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের চিহ্নিত ও তাদের নজরদারিতে রাখতে।