শিক্ষা প্রকল্প ঘিরে ডিজি ও ডিডি’র নয় ছয়!

দেশে ঝরেপড়া শিশু-কিশোরদের শিক্ষার আওতায় আনতে উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর হাতে নেয়া একটি প্রকল্প ঘিরে বিস্তর দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক (ডিজি) তপন কুমার ঘোষ ও উপ পরিচালক (ডিডি) রুকনুদ্দিন সরকারে বিরুদ্ধে।

শিক্ষা প্রকল্প ঘিরে ডিজি ও ডিডি’র নয় ছয়!

দেশে ঝরেপড়া শিশু-কিশোরদের শিক্ষার আওতায় আনতে উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর হাতে নেয়া একটি প্রকল্প ঘিরে বিস্তর দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক (ডিজি) তপন কুমার ঘোষ ও উপ পরিচালক (ডিডি) রুকনুদ্দিন সরকারের বিরুদ্ধে।

জানা যায়, দেশব্যাপী ঝরেপড়া শিশু-কিশোরদের শিক্ষার আওতায় আনতে ২০১৯ সালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর আওতায় সেকেন্ড চান্স এডুকেশন (সাব-কম্পোনেন্ট ২.৫ আউট অব স্কুল চিল্ড্রেন-(ওওএসসি) প্রোগ্রাম, পিইডিপি-৪) কর্মসূচি গ্রহণ করে। কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য দেশের ৬১ জেলা থেকে একটি লিড এনজিও নির্বাচন করতে বলা হয়।

তবে অভিযোগ ওঠে, প্রকল্পের কর্মকর্তা ও অফিস সহায়ক নিয়োগ এবং সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোতে এনজিও নির্বাচন নিয়ে অস্বচ্ছতা ও অনিয়মের।

অভিযোগে বলা হয়, স্বজনপ্রীতি ও অবৈধভাবে টাকা লেনদেনের মাধ্যমে সাতক্ষীরা, চাপাইনবাবগঞ্জ এবং গাইবান্ধা জেলার নির্দিষ্ট ৩০ জন কর্মকর্তা ও ৪ জন অফিস সহায়ককে কোন রকম বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই নিয়োগ দিয়েছেন উপ আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মহাপরিচালক ও উপ পরিচালক। একই সাথে সেকেন্ড চান্স শিক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়নে জেলা ভিত্তিক প্রধান এনজিওকে বাদ দিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তারা অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের এনজিওসমূহকে কাজ পাইয়ে দিয়েছেন।

উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মহাপরিচালক তপন কুমার ঘোষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় অভিযোগের বিষয়ে তার কোন মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে দুর্নীতির বিষয়ে জানতে উপ আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো কার্যালয়ে অভিযুক্ত উপ পরিচালক রোকনুদ্দিন সরকারের অনুসন্ধানে গেলে দেখা যায় তাকে শিক্ষা অধিদপ্তরের বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগে বদলি করা হয়েছে। তবে সেখানে গেলেও তিনি এ প্রতিবেদকের সাথে দেখা করতে অস্বীকৃতি জানান। মুঠোফোনে জানান, প্রকল্পের দুর্নীতির বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে চাননা। তার যা বলার তা তিনি চিঠির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এবিষয়ে জানতে চাইলে সেখান থেকে জেনে নিতে বলেন তিনি।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপ আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর ডিজি ও ডিডির যৌথ যোগসাজশে ব্রাক ও আরডিআরএস এর মত বড় এনজিও থাকা সত্ত্বেও ১ কোটি টাকা ঘুষের বিনিময়ে রংপুর, রাজশাহী ও ঠাকুরগাঁও জেলায় প্রকল্পের কাজ দেওয়া হয় ইএসডিও নামের একটি এনজিওকে। ৩০ লাখ টাকার বিনিময়ে বিএলপি কর্মসূচি নির্বাচনের সময় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের কালো তালিকাভুক্ত সাতক্ষীরা উন্নয়ন সংস্থা নামের এনজিওকে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ দেওয়া হয়।

একইভাবে ২৫ লাখ টাকায় চাপাইনবাবগঞ্জের চেতনা মহিলা উন্নয়ন সংস্থা, ২৫ লাখ টাকায় মানিকগঞ্জের পাশা, ২০ লাখ টাকায় গোপালগঞ্জের স্বদেশ মহিলা সংস্থা, ২০ লাখ টাকায় জামালপুরের সিডো, ৪০ লাখ টাকায় বরিশাল ও ঝালকাঠির ভোসড, ২০ লাখ টাকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নিবেদন কমপ্লেক্স, ২০ লাখ টাকায় চাঁদপুরের সমাহার এনজিও, ১০ লাখ টাকায় কক্সবাজারের স্কাস, ২০ লাখ টাকায় কুড়িগ্রামের চিন্নমুল, ৩০ লাখ টাকায় গাজীপুরের উজান এবং ৩০ লাখ টাকার বিনিময়ে টাঙ্গাইলের উদয়ন এনজিওকে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ দেওয়া হয়।

অভিযোগ সূত্রে আরও জানা যায়, সেকেন্ড চান্স শিক্ষা কর্মসূচির কাজে ৬১ জেলায় প্রায় তিনশো এনজিওর সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হলেও কেবলমাত্র ঘুষ প্রদানকারী এনজিওসমূহকেই নির্বাচন করা হয়। এছাড়া প্রকল্প কর্মসূচির কাজে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কমপক্ষে ১০টি জেলায় প্রধান এনজিওকে নির্বাচন করা নির্দেশনা থাকলেও সেখানে মাত্র ২টি জেলায় ব্রাক এবং আর ডি আর এস-কে ৪ জেলায় নির্বাচন করা হয়। আর এসব কাজ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন না মেনেই করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

প্রকৌশল নিউজ/শা