সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের ভার নিতে চায় না ঠিকাদাররা

দেশে বিদ্যমান নিয়মানুযায়ী কোনো সড়ক অবকাঠামোর উন্নয়ন কাজ শেষ করার ৩ বছর পর্যন্ত রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ঠিকাদারদের নেয়ার কথা। কিন্তু ঠিকাদাররা এতো দীর্ঘসময় ধরে সড়ক অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের ভার নিতে চাইছে না। বরং তারা রক্ষণাবেক্ষণের দায় এক বছর করার দাবি জানিয়েছে।

সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের ভার নিতে চায় না ঠিকাদাররা

দেশে বিদ্যমান নিয়মানুযায়ী কোনো সড়ক অবকাঠামোর উন্নয়ন কাজ শেষ করার ৩ বছর পর্যন্ত রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ঠিকাদারদের নেয়ার কথা। কিন্তু ঠিকাদাররা এতো দীর্ঘসময় ধরে সড়ক অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের ভার নিতে চাইছে না, বরং তারা রক্ষণাবেক্ষণের দায় এক বছর করার দাবি জানিয়েছে।

কিন্তু সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) সংশ্লিষ্টদের মতে, সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন কাজের গুণগত মান ঠিক রাখার স্বার্থেই এ নিয়ম করা হয়েছে। যা বদলানোর কোনো চিন্তা-ভাবনা সওজ অধিদপ্তরের আপাতত তাদের নেই। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সড়ক অবকাঠামো নির্মাণের পর তা ৩ তিন বছর সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব। ওই সময়ের মধ্যে সড়কে কোনো ত্রুটি দেখা দিলে ঠিকাদারকে নিজ খরচে তা ঠিক করে দিতে হবে। উন্নয়নকাজ শেষ হওয়ার পর একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তা রক্ষণাবেক্ষণের দায়-দায়িত্ব ঠিকাদারকে দেয়ার বিষয়টিকে বলা হয় ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড (ডিএলপি)। সড়ক অবকাঠামোর ক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে আদর্শ ডিএলপি সাধারণত ১২ মাস। সওজ অধিদপ্তরেও কয়েক বছর আগে ডিএলপি ১২ মাসই ছিল। কিন্তু দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক-মহাসড়ক অবকাঠামোর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর পরই নষ্ট হয়ে যাওয়া, নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের অভিযোগসহ ঠিকাদারদের মানহীন কাজের জন্য এর মেয়াদ বাড়িয়ে ৩৬ মাস নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সওজ অধিদপ্তর তা কেবল বড় বড় উন্নয়ন কাজের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য রেখেছে। আর ছোট কাজের ক্ষেত্রে রক্ষণাবেক্ষণের মেয়াদ ১২ মাসই রাখা হয়েছে।

সূত্র জানায়, সরকার সড়ক অবকাঠামো খাতে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করছে। কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে দেখা যাচ্ছে বিপুল বিনিয়োগ সত্ত্বেও অবকাঠামো টেকসই হচ্ছে না। মূলত ওই ধরনের ঘটনা এড়াতেই ডিএলপি বাড়ানো হয়েছে। ফলে ঠিকাদাররা কাজ করার সময় সর্বোচ্চ সচেতনতা অবলম্বন করতে বাধ্য হবে। তারা টেকসই অবকাঠামো গড়ে তুলবে, যাতে পরবর্তী সময়ে রক্ষণাবেক্ষণের খুব একটা প্রয়োজন না হয়। তবে ঠিকাদাররা প্রায়ই ডিএলপির মেয়াদ আবার এক বছর করার দাবি জানিয়ে আসছে। যদিও সওজ অধিদপ্তরের এখনো তেমন কোনো পরিকল্পনা নেই।

ঠিকাদারদের দাবি, দীর্ঘমেয়াদি ডিএলপির কারণে তারা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে। তাছাড়া ডিএলপির সঙ্গে কাজের বিল আদায়ের বিষয়টি জড়িত। ডিএলপি দীর্ঘ হওয়ার কারণে বিল পেতেও দেরি হয়।

সূত্র আরো জানায়, বিশ্বজুড়েই সড়ক অবকাঠামোর ক্ষেত্রে আদর্শ ডিএলপি ১২ মাস। ওই সময় নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে। ঠিকাদার কেবল অবকাঠামোর নির্মাণজনিত ত্রুটিরই দায় নেবেন। আর ওই নির্মাণজনিত ত্রুটির জন্য ১২ মাস সময়ই যথেষ্ট। সাধারণত আবহাওয়ার ভিন্নতার নিরিখে সড়কের টেকসই যোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য ডিএলপি ১২ মাস নির্ধারণ করা হয়।

এদিকে বিশেষজ্ঞরা সড়ক অবকাঠামোর নির্মাণ-পরবর্তী দায় শুধু ঠিকাদারদের ওপরই চাপিয়ে দেয়ার পক্ষপাতী নয়। তাদের মতে, যেসব সংস্থা অবকাঠামো নির্মাণের দায়িত্বে থাকে, নির্মাণ-পরবর্তী দায় সেসব সংস্থার প্রকৌশলীদের ওপরও অনেকটুকু বর্তায়। কারণ ঠিকাদারদের কাছ থেকে গুণগত মান বজায় রেখে কাজ আদায়ের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের। আবার সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণের পর নকশাগত জটিলতার কারণেও অনেক সময় ত্রুটি দেখা দেয়। সেক্ষেত্রে দায়টা যারা নকশা প্রণয়ন করেছে তাদের ওপর বর্তায়, ঠিকাদারের ওপর নয়। সার্বিক বিবেচনায় ডিএলপি সাধারণত এক বছরই হওয়া উচিত। তবে যেসব বড় বড় কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে ঠিকাদারদের সঙ্গে আলোচনা করে ডিএলপি বাড়ানো যেতে পারে।

অন্যদিকে সম্প্রতি একটি অংশীজন সভায় সওজ অধিদপ্তর ঠিকাদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার কামাল ফিরোজ ডিএলপি কমানোর দাবি জানায়।

তিনি জানান, নিয়ম অনুযায়ী ডিএলপির জন্যএকটি কাজের মোট বিলের ১০ শতাংশ কেটে রাখা হয়। অর্থাৎ নির্মাণ পরবর্তী রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নির্ধারিত ৩ বছর সময় শেষ হওয়ার আগে ঠিকাদার কেটে রাখা ওই ১০ শতাংশ টাকা পাবে না। সেটা এক বছর হলে ক্ষতি নেই। তাতে আপত্তিও নেই। কিন্তু পুরো বিল পাওয়ার জন্য কাজ শেষ করার ৩ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করা কঠিন। এমন নিয়মের কারণে ঠিকাদাররা মারাত্মকভাবে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে। তাছাড়া পিপিআরের (পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮) কোথাও ডিএলপি ৩ বছর করার কথা উল্লেখ নেই। এলজিইডি, পিডব্লিউডির মতো বড় সংস্থাগুলোতেও এই সময় এক বছর। কিন্তু সওজ অধিদপ্তর তা ৩ বছর করে রেখেছে। যা পুরোপুরি অযৌক্তিক।

ডিএলপি বাড়ানোর প্রেক্ষাপট সম্পর্কে সওজর প্রধান প্রকৌশলী আবদুস সবুর জানান, রক্ষণাবেক্ষণের সময় বাড়ানোর প্রধান উদ্দেশ্যই হলো টেকসই সড়ক অবকাঠামো নির্মাণ।

প্রকৌশল নিউজ/এমএস