ইলেক্টোরাল ভোটে বাইডেনই মার্কিন প্রেসিডেন্ট

ইলেক্টোরাল ভোটে বাইডেনই মার্কিন প্রেসিডেন্ট

নানা জল্পনা-কল্পনা, আইনি লড়াই শেষে অবশেষে মার্কিন মুল্লুকের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হলেন ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেন। একই সঙ্গে কমলা হ্যারসিও ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। সোমবার রাতে অবশেষে জো বাইডেনকে ৪৬তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করেছে দেশটির ইলেক্টোরাল কলেজ। এর ফলে মার্কিনবাসীদের আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন প্রেসিডেন্ট পেতে দীর্ঘ ৪৩ দিনের প্রতীক্ষার অবসান হলো। 

যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সোমবার সন্ধ্যায় ক্যালিফোর্নিয়া তাদের ইলেক্টোরাল ভোটের ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে। এর মধ্য দিয়ে শেষ হয় ইলেক্টোরাল ভোটের ফলাফল ঘোষণা। বাইডেন পেয়েছেন ৩০৬টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট ও ট্রাম্প পেয়েছেন ২৩২টি ভোট। 

সোমবার রাতে ডেলওয়ারের উইলমিংটন থেকে এক বিবৃতিতে বাইডেন বলেন, গণতন্ত্র বজায় থেকেছে, জনগণ ভোট দিয়েছে। আমেরিকার রাজনীতিবীদরা ক্ষমতা গ্রহণ করেন না, জনগণ তাদের ক্ষমতা দেয়। এই বিজয়ে আমাদের নির্বাচনের অখণ্ডতা বজায় রয়েছে। তিনি বলেন, ‘পাতা বদলের এটাই সময়। তিনি আরও বলেন, আমাদের একত্র হতে হবে, পরিস্থিতি বদলাতে হবে। আমি সব আমেরিকানের প্রেসিডেন্ট হবো।

ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের ফলাফের পর ১৩ মিনিটের বক্তৃতায় তিনি ট্রাম্পকে ইঙ্গিত করে বলেন, তারা আমাদের নির্বাচনী প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেস্টা করেছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, জনগণের প্রতি শ্রদ্ধা না দেখিয়ে অপ্রয়োজনে সে আদালতে গেছেন। আমেরিকানদের মাঝে বহু আগেই গণতন্ত্রের শিখা প্রজ্বলিত হয়েছে। সেই শিখা কখনো নিভে যাবে না। আমেরিকাকে আবারো সেই পুরোনো ঐক্যবদ্ধ জায়গায় নিয়ে যাওয়াই হবে আমার মূল লক্ষ্য। 

আগামী ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করবেন ডেমোক্র্যাট দলের এই নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। তার আগে তার জয়ের আনুষ্ঠানিক এই ঘোষণা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

এর আগে, গত ৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তারপর থেকেই বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের ভোটের ফল আসতে শুরু করে এবং জো বাইডেনের জয়ের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কিন্তু শুরু থেকেই বাইডেনকে জয়ী বলতে নারাজ ছিলেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি এবারের নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ আনেন। এমনকি তিনি এও দাবি করেছেন যে, এবারের নির্বাচন ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বিশৃঙ্খল নির্বাচন।

শুধু মুখে বলেই ক্ষান্ত হননি ট্রাম্প। বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে তার নির্বাচনী প্রচারণা শিবির ভোটের ফলাফলের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে। যদিও সেখানে বড় ধাক্কা খেয়েছেন ট্রাম্প। কোনো মামলায় তিনি জয়ী হননি বরং এসব মামলাগুলো আদালত খারিজ করে দিয়েছে। সর্বশেষ তার প্রচারণা শিবিরের দুই মামলা সুপ্রিম কোর্টেও খারিজ হয়েছে। 

গত ৩ নভেম্বরের নির্বাচনের পর ট্রাম্প বহুবার নিজেকে জয়ী দাবি করেছেন এবং নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু একবারও তিনি এসব বিষয়ে কোনো অকাট্ট প্রমাণ হাজির করতে পারেননি। 

যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্য ও ওয়াশিংটন ডিসি মিলে মোট ৫৩৪টি ইলেক্টোরাল ভোট। এর মধ্যে ২৭০টি ভোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট।

অঙ্গরাজ্যগুলো থেকে ইলেক্টোরাল ভোট নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ওয়াশিংটনে পাঠানো হবে। ৬ জানুয়ারি কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে এসব ভোটের বন্ধ খাম খুলে আবার গণনা করা হবে। সেখানে আইনপ্রণেতারা আপত্তি উত্থাপনের সুযোগ পাবেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষে শতাধিক রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা এমন আপত্তি উপস্থাপন করতে পারেন। কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট সংখ্যাগরিষ্ঠতা এমন যেকোনো আপত্তির প্রয়াস নাকচ করতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে।

নজিরবিহীন কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা না ঘটলে আগামী ২০ জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেন শপথ নেবেন। নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে যাত্রা শুরু হবে বাইডেন প্রশাসনের।