গলিতে আড্ডা, প্রধান সড়ক ফাঁকা

সারাদেশে সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধের তৃতীয় দিন চলছে। করোনা সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় গত বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) থেকে এই কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। এই সময়ে মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি ও সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এ কারণে প্রধান সড়কে যান চলাচল এবং লোক সমাগম কম হলেও পাড়া মহল্লায় স্বাভাবিক জনজীবন চলতে দেখা গেছে। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত। 

গলিতে আড্ডা, প্রধান সড়ক ফাঁকা

সারাদেশে সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধের তৃতীয় দিন চলছে। করোনা সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় গত বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) থেকে এই কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। এই সময়ে মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি ও সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এ কারণে প্রধান সড়কে যান চলাচল এবং লোক সমাগম কম হলেও পাড়া মহল্লায় স্বাভাবিক জনজীবন চলতে দেখা গেছে। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত। 

সরেজমিনে রাজধানীর কাওরানবাজার, মিরপুর, খিলগাঁও এলাকা ঘুরে দেখে গেছে, আগের দুই দিনের মতো আজও সড়ক বেশ ফাঁকা। তবে গত দুই দিনের তুলনায় কিছুটা মানুষের আনাগোনা বেড়েছে। সেইসঙ্গে কিছু প্রাইভেট যানবাহন, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, পিকআপ ছাড়া অন্য যানবাহন চলতে দেখে যায়নি। কিছু কিছু অফিস খোলা থাকায় সেসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা অফিসের গাড়ি অথবা রিকশায় চলাচল খিলগাঁও রেলগেট এলাকার অলিগলিতে দোকানপাট গত দুই দিনের তুলনায় একটু বেশি খোলা দেখা গেছে। মানুষের উপস্থিতিও বেশি। পুলিশের টহল না থাকায় ইচ্ছেমতো নিজেদের মতো ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে বহু মানুষকে। অনেকের মুখে কোনও মাস্ক দেখা যায়নি। তবে রেলগেটে কিছুসংখ্যক পুলিশকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। তাদের তৎপরতা ছিল কম। এতে করে যে যার মতো চলাচল করছে।

তিলপাপাড়া জামে মসজিদের সামনে বেশ কয়েকজন যুবককে আড্ডা দিতে দেখা গেছে। তাদের একজন শরিফুল ইসলাম। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাসায় একা একা সময় কাটাতে আর ভালো লাগছে না। তাই বন্ধুদের ফোন করে এই জায়গায় আসতে বলেছি। একটু সময় কাটাতে। এখন বসে একটু গল্প করছি।’

চিনি কিনতে দোকানে এসেছেন জাহিদুল ইসলাম। বিস্কুট, চানাচুরসহ অন্যান্য জিনিস কিনতে দোকনে জুনায়েদ আহমেদ। আর দুধ কেনার জন্য এসেছেন আসাদুল। জাহিদ, জুনায়েদ, আসাদুল প্রত্যেকেই প্রতিবেশী। দোকানে কেনাকাটা করতে এসে মেতে উঠেছেন আড্ডায়। দোকানে মাস্ক পরে এলেও আড্ডায় গল্প করার সময় কারও মুখে ছিল না মাস্ক। একটু পর পাশের চায়ের দোকানে গিয়ে চলে তাদের আড্ডা।

রাজধানীর মিরপুরে ১ নম্বরে মধ্য পাইকাপাড়ায় এমন ঘটনা প্রতিদিনকার। সরকার ঘোষিত লকডাউনের মধ্যে দোকানে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে এসে এভাবেই জমে উঠে আড্ডা। এভাবেই মানুষজন সকালে, বিকালে নিত্যপণ্য কেনার জন্য দোকনে আসেন, আর চায়ের দোকানগুলো আড্ডা চলে শাটার নামিয়ে। নানান বসয়ী মানুষ আড্ডা দিচ্ছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। মূল সড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান থাকলেও পাড়া মহল্লায় অভিযান না থাকায় মানুষের চলাফেরা অনিয়ন্ত্রিত।

রাজধানীর কলাবাগান এলাকায় দেখা যায়, প্রধান সড়কে যানবাহন তুলনামূলকভাবে কম। তবে অলিগলিতে মানুষের স্বাভাবিক চলাচল দেখা গেছে। কেউ সকালের নাস্তা কিনতে কিংবা কেউ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে বাড়ি থেকে বের হয়েছেন। তবে এলাকার ভেতরে স্বাস্থ্যবিধি মানতে নারাজ সাধারণ মানুষ। প্রধান সড়কে মাস্ক পরে চলাচল করলেও অলিগলিতে মাস্ক পরার প্রতি উদাসীনতা লক্ষ করা গেছে।

বাসার কাছে চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছিলেন আসলাম। তিনি বা তার সঙ্গে থাকা কারো মুখে মাস্ক নেই। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাসার নিচে তো তাই আর পরিনি। এলাকার থেকে বের হলে অবশ্যই পরি।’

এদিকে কঠোর বিধিনিষেধে কারণ ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়ায় শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ২১৩ জনকে ২ লাখ ১৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে ৩২০ জনকে। এর আগের দিন আটক করা হয় ৫৫০ জনকে। বিধিনিষেধ অমান্য করায় শনিবার সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত শুধু তেজগাঁও বিভাগেই আটক করা হয়েছে ৪৭ জনকে।

সকাল থেকে পুরান ঢাকার প্রধান সড়কগুলোয় যান চলাচল ছিল একেবারেই সীমিত। প্রয়োজন ছাড়া বের হলেই পড়তে হচ্ছে পুলিশের জেরায়। রাস্তার মোড়ে মোড়ে পুলিশের চেকপোস্ট। মূলত লকডাউনের মধ্যে যে সব অফিস খোলা রাখা হয়েছে, সেখানকার কর্মীদের বহনকারী স্টাফ বাস, দুই-একটি প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, রিকশা ও অ্যাম্বুলেন্স চলতে দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তায় পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি, র‍্যাব, আনসার এবং সেনা সদস্য মোতায়েন রয়েছে। বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ প্রাইভেটকার থামিয়ে পরিচয়পত্র যাচাই করছিলেন তারা। সত্যতা যাচাই না হলেই গুণতে হচ্ছে জরিমানা। 

সূত্রাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ‘যারা লকডাউন অমান্য করছে তাদের জরিমানা করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে ডিএমপি অর্ডিন্যান্সে আটক করে তাদের চালান করে দেওয়া হচ্ছে।’