তীব্র শৈত্যপ্রবাহের ফাঁদে দেশ, থাকবে সপ্তাহজুড়ে

শীতকালের দু’মাসের মধ্যে পৌষ মাস ইতোপূর্বেই গত হয়েছে, চলছে মাঘ মাস। মাঘ মানেই হাড় কাঁপানো শীতের সময়কাল। দিনে সূর্যের দেখা মিললেও বাতাসে রয়েছে তীব্র শীত। এই শীতে যত বড়ই জোয়ান-পালোয়ান হোক না কেনো, সবাই কাতর।

তীব্র শৈত্যপ্রবাহের ফাঁদে দেশ, থাকবে সপ্তাহজুড়ে

শীতকালের দু’মাসের মধ্যে পৌষ মাস ইতোপূর্বেই গত হয়েছে, চলছে মাঘ মাস। মাঘ মানেই হাড় কাঁপানো শীতের সময়কাল। কথায় আছে ‘মাঘের শীতে বাঘে কাঁপে’। বাস্তবে বাঘ নয়, তীব্র শৈত্যপ্রবাহের কারণে কাঁপছে পুরো দেশ। এই শৈত্যপ্রবাহ সপ্তাহজুড়ে অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত ঘন কুয়াশা থাকবে। হিমেল হাওয়ায় শীতের অনুভূতি বেশি হবে। আগামীকাল (মঙ্গলবার) থেকে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়ার সম্ভাবনা থাকলেও শীতের দাপট এ সপ্তাহ জুড়ে চলবে।

২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সারাদেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। তবে আগামী দুইদিন তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে। এর পরের পাঁচদিন আবার বৃষ্টিপাতেরও সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

সোমবার (০১ ফেব্রুয়ারি) আবহাওয়া অফিসের তথ্যে দেখা যায়, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, মাইজদীকোর্ট, কক্সবাজার, কুতুবদিয়া ও সিলেট - এই ছয়টি অঞ্চল বাদে পুরো দেশের ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। চলতি মৌসুমে প্রথমবারের মতো আজ (সোমবার) ঢাকায় শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ঢাকায় আজ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আজ (সোমবার) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে শ্রীমঙ্গলে ৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তারপর চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন রেকর্ড হয়েছে ৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা।

আবহাওয়াবিদ শাহীনুর রহমান জানান, দেশের বিভিন্ন জায়গায় চলছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। যার ফলে নীলফামারী, চুয়াডাঙ্গা ও মৌলভীবাজার, ঢাকা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, বরিশাল, রংপুর, খুলনা, সীতাকুণ্ডু, রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা, ফেনী, সন্দ্বীপ, হাতিয়া অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকবে।

টানা শৈত্যপ্রবাহের ধকল কাটছে না গোটা উত্তরাঞ্চলে। ফলে মানুষের পাশাপাশি এখন পশু-পাখিরাও শীতে কাবু হয়ে পড়েছে। ভোরে ঘন কুয়াশার কারণে প্রধান সড়কগুলোতে হেড লাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। টানা শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশার কারণে সাধারণ মানুষগুলোর জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডায় ছিন্নমূল মানুষ গুটিশুটি হয়ে পড়েছেন। শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি কষ্ট পাচ্ছেন। ঠাণ্ডায় এরই মধ্যে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে হাসপাতাল গুলোতে।

রাজশাহীর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সকাল ৯টায় রেকর্ডকৃত তাপমাত্রা ছিল ৬.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আদ্রতার পরিমাণ শতভাগ রয়েছে। হঠাৎ করে তাপমাত্রা কমে আসার কারণে সকালে ঘন কুয়াশার দেখা মিলছে। এছাড়াও সন্ধ্যা নামার আগেই শহর ও গ্রামাঞ্চলে ধোঁয়ার মতো ঘন কুয়াশা দেখা যাচ্ছে। রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলে আরও ২ থেকে ৩ দিন এ শৈত্যপ্রবাহ বিরাজ করবে। তারপর ধীরে ধীরে শীত কমে আবহাওয়া স্বাভাবিক পর্যায়ে আসবে।

এদিকে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে সোমবার (০১ ফেব্রুয়ারি) সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রের্কড করা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এবারের শীতে কয়েক দফা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রের্কড করা হয়েছে চায়ের রাজ্য শ্রীমঙ্গলে। মাঘ মাসে শীতের এই দাপটে অনেকটাই ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বয়ে যাচ্ছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। কনকনে ঠান্ডা বাতাসের সঙ্গে জেকে বসেছে তীব্র শীত।

অপরদিকে উত্তরাঞ্চলীয় জেলা কুড়িগ্রামে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ও উত্তরীয় হিমশীতল বাতাস বিরাজ করায় কোনোভাবেই কমছে না হাড় কাঁপানো শীতের তীব্রতা। প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। জেলা প্রশাসন ও বেসরকারিভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তীব্র শীতের কবল থেকে রেহাই পেতে মানুষ খড়কুটো ও কাঠ জ্বালিয়ে শীত নিবারনের চেষ্টা চালাচ্ছে।

দুপুর পর্যন্ত ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকছে প্রকৃতি। দুপুরে ২-৩ ঘণ্টার জন্য সূর্য উঁকি দিলেও তাতে উত্তাপ থাকছেনা। রাতভর টিপটিপ বৃষ্টির মতো ঝরছে ঘন কুয়াশা। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে যারা কাজে বের হচ্ছে তাদের অবস্থা জুবুথুবু। প্রয়োজন ছাড়া খুব বেশি বের হচ্ছে না মানুষ।

সোমবার কুড়িগ্রামে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

প্রকৌশল নিউজ/এস