প্রতারক সাহেদ গ্রেপ্তারের এক বছর, ১০ মামলায় চার্জশিট
মহামারী পরিস্থিতিতে করোনা নমুনা পরীক্ষার ভুয়া সনদ প্রদানের অভিযোগে এক বছর আগে গ্রেপ্তার সাহেদ করিমের বিরুদ্ধে দায়ের করা ১৮টি মামলার মধ্যে ১০টি মামলার চার্জশিট প্রদান করেছে তদন্তকারী সংস্থা। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) ২টি, উত্তরা পশ্চিম থানায় ১টি, সিআইডিতে ৩টি এবং দুদকে দায়ের হওয়া ২টি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে।
মহামারী পরিস্থিতিতে করোনা নমুনা পরীক্ষার ভুয়া সনদ প্রদানের অভিযোগে এক বছর আগে গ্রেপ্তার সাহেদ করিমের বিরুদ্ধে দায়ের করা ১৮টি মামলার মধ্যে ১০টি মামলার চার্জশিট প্রদান করেছে তদন্তকারী সংস্থা। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) ২টি, উত্তরা পশ্চিম থানায় ১টি, সিআইডিতে ৩টি এবং দুদকে দায়ের হওয়া ২টি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে।
প্রতারণাসহ বিভিন্ন ধরণের অনিয়ম, সরকারের সঙ্গে চুক্তিভঙ্গ, করোনাভাইরাস পরীক্ষার ভুয়া প্রতিবেদন দেওয়া ও রোগীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগে গত বছরের ৬ জুলাই র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমের নেতৃত্বে রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়।
এর পরদিন ৭ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশে র্যাব রিজেন্ট হাসপাতাল ও তার মূল কার্যালয় সিলগালা করে দেয়। একইদিন উত্তরা পশ্চিম থানায় ভুয়া করোনা রিপোর্ট প্রদান ও সাহেদ করিমের বাড়ি থেকে জাল নোট উদ্ধারের ঘটনায় র্যাব বাদী হয়ে রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদ করিমসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করে। এরপর থেকে সাহেদ পলাতক ছিল।
ওই বছরের ১৭ জুলাই ভোরে সাতক্ষীরা থেকে সাহেদকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে র্যাব। সাতক্ষীরার দেবহাটা থানায় র্যাব বাদী হয়ে সাহেদের বিরুদ্ধে দায়ের করা অস্ত্র আইনের মামলাটির চার্জশিট প্রদান করেছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সাহেদের বিরুদ্ধে র্যাবের দায়ের করা ৩টি মামলার প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়েছে। মামলা ৩টি এখন বিচারাধীন। সাহেদ করিম ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী রয়েছেন।
বিদেশে টাকা পাচার, প্রতারণা করে টাকা আত্মসাৎ, ভুয়া করোনা রিপোর্ট প্রদান ও মানুষকে ভয়ভীতির অভিযোগে পুলিশ সাহেদ করিমের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় ১১টি ও উত্তরা পূর্ব থানায় ১টি মামলা দায়ের করে পুলিশ। এই ১২ টি মামলার মধ্যে ৯ টি মামলা তদন্ত করছে সিআইডি। বাকি ৩ টি মামলার মধ্যে ২ টি ডিবি ও ১ টি উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ তদন্ত করছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে ১১ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মানি লন্ডারিং আইনে উত্তরা পশ্চিম থানায় পুলিশ বাদী হয়ে দায়ের করা মামলাটি তদন্ত করছে সিআইডি। এই মামলাটির প্রতিবেদন দাখিল করা হয়নি। এ ব্যাপারে সিআইডি’র বিশেষ পুলিশ সুপার (ফিনানসিয়াল ক্রাইম) হুমায়ুন কবীর বলেন, লকডাউনের কারণে মামলার তদন্তের তথ্য পেতে একটু সময় লাগছে। তবে আমরা তদন্তে ১১ কোটি টাকার বেশি টাকা পাচারে তথ্য পেয়েছি। শিগগির এই মামলার চার্জশিট দেওয়া হবে।
উত্তরায় সাহেদ করিমের গাড়িতে মদ ও ফেনসিডিল রাখা এবং একটি অবৈধ অস্ত্র রাখার অভিযোগে উত্তরা পশ্চিম থানায় পুলিশ পরিদর্শক এস এম গাফফারুল আলম বাদী হয়ে দুইটি মামলা দায়ের করেন। এই দুইটি মামলা তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ(ডিবি)। মামলা দুইটির তদন্ত প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, মামলা দুইটি তদন্ত কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। শিগগির এই দুই মামলায় চার্জশিট দেওয়া হবে।
সিআইডির মামলা তদন্তকারী একটি সূত্র জানায়, সাহেদ করিমের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলোর মধ্যে সিআইডি ৭ টি মামলার চার্জশিট দাখিল করেছে। এর মধ্যে উত্তরায় ইমতিয়াজ হাবিব সিনহা নামে এক বালু ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৫৮ লাখ টাকার বালু গ্রহণ করে তার মূল্য পরিশোধ না করার ঘটনায় একটি মামলায় চার্জশিট প্রদান করেছে। এই মামলায় সাহেদ করিম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দির ভিত্তিতে সিআইডি তার বিরুদ্ধে চার্জশিট প্রদান করে।
মূলত বালু ব্যবসার প্রতারণা নিয়ে সাহেদের বিরুদ্ধে ৭ টি মামলা দায়ের হয়। এই ৭ টি মামলার চার্জশিট প্রদান করেছে সিআইডি। মামলাগুলোতে সাহেদের বিরুদ্ধে বালু ব্যবসায় ৭ জন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৪ কোটি ৯০ লাখ টাকার বালু গ্রহণ করে মূল্য পরিশোধ না করার অভিযোগ করা হয়েছে।
সিআইডির অপর একটি সূত্র জানায়, সাহেদের বিরুদ্ধে ৩৬ লাখ টাকার মালামাল চুরির অভিযোগে আনোয়ার হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী বাদী হয়ে উত্তরা পূর্ব থানায় একটি মামলা করেন। এই মামলাটি সিআইডি তদন্ত করছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে সাহেদ করিমকে এই মামলা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মালামাল চুরির কথা স্বীকার করেন। চুরির কাজে জড়িত সহযোগীদের নাম এখনও জানা যায়নি। এ কারণে এই মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়নি।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি সূত্র জানায়, পদ্মা ব্যাংকের ২ কোটি ৭১ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের সহকারী পরিচালক সিরাজুল হক বাদী হয়ে সাহেদ করিমের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন দুদকে। এছাড়া এনআরবি ব্যাংক থেকে দেড় কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের ওই সহকারী পরিচালক বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করেন। মামলা দুইটি এখনও তদন্তাধীন।
প্রকৌশল নিউজ/এমআরএস