রেইনট্রি মামলার বিচারক কামরুন্নাহারকে শোকজ করা হবে : আইনমন্ত্রী

ধর্ষণের ৭২ ঘণ্টা পর পুলিশকে মামলা না নেওয়া সংক্রান্ত পর্যবেক্ষণের জন্য ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ৭-এর বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহারকে শোকজ করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

রেইনট্রি মামলার বিচারক কামরুন্নাহারকে শোকজ করা হবে : আইনমন্ত্রী

ধর্ষণের ৭২ ঘণ্টা পর পুলিশকে মামলা না নেওয়া সংক্রান্ত পর্যবেক্ষণের জন্য ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ৭-এর বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহারকে শোকজ করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

রোববার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।

আনিসুল হক বলেন, বিচারকের এ অবজারভেশন সংবিধান পরিপন্থী। তার এ বক্তব্য বিচারকদের জন্য বিব্রতকর। 

আনিসুল হক বলেন, ‘এখন কথা হচ্ছে এটা এত গুরুত্বপূর্ণ কেন? বিজ্ঞ বিচারকরা প্রতিদিনই কিন্তু রায় দেন। রায়ে কেউ সন্তুষ্ট হয়, কেউ অসন্তুষ্ট হয়। যারা অসন্তুষ্ট হন, আমাদের ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী, সংবিধান অনুযায়ী, তারা উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারেন। সর্বোচ্চ আদালত হচ্ছে আপিল বিভাগ। সেই আপিল বিভাগের সাংবিধানিক কিছু বাড়তি ক্ষমতাও আছে। সেগুলো তারা প্রয়োগ করেন। রায় দিলেই যে কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তা নয়। তারা মেরিটের উপরে, আইনের উপরে, রায় দেয়ার ব্যাপারে সম্পূর্ণ স্বাধীন।’

‘কিন্তু এখানে যে ঘটনাটা ঘটেছে সেটা হচ্ছে একজন বিজ্ঞ বিচারক তিনি ওপেন কোর্টে রায় দেয়ার সময় তার পর্যবেক্ষণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলেছেন, ৭২ ঘণ্টা পর কেউ যদি কোনো ধর্ষণ মামলা করতে আসে, তাহলে সেই মামলাটা গ্রহণ না করতে। এটাই হচ্ছে আপত্তির জায়গা।’

আনিসুল হক বলেন, ‘ব্যাপারটা হচ্ছে কোনো ফৌজদারি অপরাধের মামলা করার ব্যাপারে তামাদি বারিত হয় না (নট বার বাই লিমিটেশন)। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার পর কিন্তু মামলা হয়নি। ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর এই মামলার প্রথম এফআইআর হয়। সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদে পরিষ্কার বলা আছে, একমাত্র আইন দিয়ে বাংলাদেশের একজন নাগরিকের বিরুদ্ধে বা পক্ষে ব্যবস্থা নিতে হবে। বিচারকের বক্তব্যটি সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদের মৌলিক অধিকার পরিপন্থি। এই দুটোই তিনি ভায়োলেট (লঙ্ঘন) করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘এই ভায়োলেশনের তাৎপর্যটা কী? অনেক রায় আছে বেআইনি হয়, আপিল বিভাগে গিয়ে স্যাটেসাইড হয়। এখানে তিনি যে কথাটা বলেছেন, সেটার একটা ইপ্লিকেশন আছে, একটা কনসিকোয়েন্স আছে। এ কারণেই আজকে বিচার বিভাগের যিনি গার্ডিয়ান, যিনি প্রধান তাকে ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। ঠিক সেই কারণেই আমি আইনমন্ত্রী হিসেবে নির্বাহী বিভাগ থেকে গতকাল বলেছিলাম, আমি প্রধান বিচারপতির কাছেই বিচার চাইতে পারি। কারণ বিচার বিভাগ স্বাধীন।’

প্রধান বিচারপতির ওই চিঠি পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, না, আমি এখনও চিঠি পাইনি। তবে শুনেছি যে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

আইনমন্ত্রী বলেন, বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। প্রধান বিচারপতি এ শোকজ পাঠাবেন। এ শোকজ যখন আমাদের কাছে পাঠানো হবে আমরা তার (বিচারক) কাছে পাঠিয়ে দেব।

গত ১১ নভেম্বর দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণের মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদসহ পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় বিচারক তাদের খালাস দেন। 

রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক কামরুন্নাহার বলেন, মামলার দুই ভিকটিম আগে থেকেই সেক্সুয়াল কাজে অভ্যস্ত। তারা স্বেচ্ছায় হোটেলে গেছেন। সেখানে গিয়ে সুইমিং করেছেন। ঘটনার ৩৮ দিন পর তারা বললেন, ‘আমরা ধর্ষণের শিকার হয়েছি’। অহেতুক তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রভাবিত হয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছেন। এতে আদালতের ৯৪ কার্যদিবস নষ্ট হয়েছে। এর পর থেকে পুলিশকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। এ ছাড়া ধর্ষণের ৭২ ঘণ্টা পর যদি কেউ মামলা করতে যায়, তা না নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।

আলোচিত ওই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় শনিবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিচারকের ওই বক্তব্যকে সম্পূর্ণ বেআইনি ও অসাংবিধানিক বলে মন্তব্য করেন এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রধান বিচারপতির কাছে চিঠি লেখেন। 

এর পর আজ রোববার বিচারক কামরুন্নাহারের বিচারিক ক্ষমতা সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করা হয়। সেই সঙ্গে তাকে আদালতে না বসার নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি।

প্রকৌশলনিউজ/সু