সংক্রমণ বাড়লেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে অনীহা; ভয়াবহ পরিণতির আশঙ্কা!

দেশে প্রতিনিয়ত করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী রোববার (৪ এপ্রিল) দেশে করোনা শনাক্তের পর রেকর্ড ৭ হাজার ৮৭ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও । কিন্তু এতোকিছুর পরেও করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধির অন্যতম প্রধান অনুসঙ্গ ‘মাস্ক’ পরতে অনীহা দেখা যাচ্ছে অনেকের মাঝেই।

সংক্রমণ বাড়লেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে অনীহা; ভয়াবহ পরিণতির আশঙ্কা!
ফাইল ছবি

দেশে প্রতিদিন বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রোববার (৪ এপ্রিল) দেশে করোনা শনাক্তের সর্বোচ্চ রেকর্ড ৭ হাজার ৮৭ জন। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ার পরেও সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধির অন্যতম প্রধান অনুসঙ্গ ‘মাস্ক’ পরতে অনীহা সাধারণ মানুষের। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, করোনার চলমান দ্বিতীয় ওয়েভে স্বাস্থ্যবিধি সঠিকভাবে না মানলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।

করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে আগামী সোমবার (৫ এপ্রিল) থেকে এক সপ্তাহের লকডাউনে যাচ্ছে সারা দেশ। ঠিক তার আগের দিনই পুরো রাজধানীজুড়ে দেখা গেছে মাস্ক পরতে জনগণের উদাসিনতা।

রোববার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় প্রায় একই চিত্র। পথচারী থেকে শুরু করে গণপরিবহন এমনকি বিলাসবহুল গাড়িতে বসেও অনেকে মাস্ক পরতে অনীহা প্রদর্শন করছেন।

এই প্রতিবেদকের সাথে বোরবার সকালে রাজধানীর ধানমন্ডির এলাকায় কথা হয় মো. বোরহান মিয়া নামের এক রিকশা চালকের সাথে। তখনো তিনি মাস্ক ব্যবহার করছিলেন না।

করোনার সংক্রমণ বাড়ছে, তবুও কেন মাস্ক পরেননি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা গরীব মানুষ। করোনা নিয়া এতো ভয় পাইলে আমাগো চলবো? আর মাস্ক পইরা রিকশা চালাইতে কষ্ট হয়, দম বন্ধ লাগে। তাই পরি নাই।’

এর কিছুক্ষণ পরেই সাথে কথা হয় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তির সাথে। তিনিও সে সময় ছিলেন মাস্কবিহীন। তার কাছেও প্রশ্ন ছিল সংক্রমণের এই দ্রুত বিস্তারের সময়েও কেন তিনি মাস্ক ব্যবহার করছেন না? জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা আসলে ঠিক হয়নি আমার। বাসা থেকে তাড়াহুড়ো করে বের হতে গিয়ে মাস্ক পরতে ভুলে গেছি। যদিও এটা ঠিক হয়নি।

এতো গেল মাস্ক ছাড়া ব্যক্তিদের কথা। সরেজমিনে এমন চিত্রও দেখা যায় যে, মাস্ক ঝুলে আছে ব্যক্তির গলায়। অর্থাৎ শুধুমাত্র মাস্ক সাথে রাখতে হবে তাই রাখা। রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অনেককে দেখা গেছে মাস্ক পরেছেন, কিন্তু তার নাকের অংশ অনাবৃত থাকছে।

এসব বিষয়ে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আই ই ডি সি আর) এর ভাইরোলজিস্ট ডা. তাহমিনা শিরিন প্রকৌশল নিউজকে বলেন, ‘এই সংক্রমণ বাড়তে থাকা অবস্থাতেও যদি আমরা মাস্ক না পরি তবে সংক্রমণ বাড়ার এই হার আরো ভয়াবহ রুপ নিতে পারে। এটা যেহেতু আক্রান্ত মানুষ থেকে মানুষে ছড়াচ্ছে এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ছড়ায় তাই মাস্ক ব্যবহার না করলে এবং যদি যথাযথ সামাজিক দূরত্ব না মানা হয় তবে এই আক্রান্তের হার আরো দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পেতে পারে।’

করোনা সংক্রমণের এই দ্রুত বিস্তারের সময়েও অনেকেই এখনো মাস্ক ব্যবহার করছেন না। এই বিষয়টিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঠিক কিভাবে দেখছে তা জানতে যোগাযোগ করা হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্লানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট) মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরার সাথে।

মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা প্রকৌশল নিউজকে বলেন, ‘মাস্ক পরাটা একদম বাধ্যতামূলক। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা মাস্ক না পরবো ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা নিজেদের নিরাপদ রাখতে পারবো না। সুতরাং মাস্ক সবাইকে পরতেই হবে।  মাস্ক না পরার পরিনতি নতুন করে বলতে চাই না। করোনা যে হারে বাড়ছে তাকে যদি আমরা নিয়ন্ত্রণে আনতে চাই তাহলে মাস্ক পরা ছাড়া কোন বিকল্প নেই। সেই সাথে অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধিও আমাদের মেনে চলতে হবে। মানে, সব ধরনের সামাজিক গেদারিং থেকে দূরে থাকা, বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোঁয়া এবং হাচি-কাশি দেওয়ার সময় যথাযথ শিষ্টাচার মানা এই বিষয়গুলোর দিকে নজর দিতে হবে।

করোনার এই দ্রুত বিস্তারের সময়ে সবাইকে মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কি পদক্ষেপ নিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই ক্ষেত্রে সবার মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে প্রশাসন যেন আমাদের সহায়তা করে সেটি আমরা বলবো। এটা আসলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা পুলিশকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যে তারা যেন সবার মাস্ক পরা নিশ্চিত করেন। কেউ মাস্ক না পরলে তাকে কি জরিমানা করা হবে বা তা কোন ধরনের শাস্তির আওতায় আসবে সে ক্ষমতাটা পুলিশকে দেওয়া আছে।’

প্রকৌশলনিউজ/এমআর