রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন সম্ভব বলে ভারতের বিশ্বাস

রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন সম্ভব বলে ভারতের বিশ্বাস

মিয়ানমার থেকে প্রাণ ভয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের উদারতাকে স্বাগত জানিয়ে ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারতের অবস্থান বাংলাদেশের মতোই। আমরাও চাই বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের একটি নিরাপদ, দ্রুত ও টেকসই প্রত্যাবর্তন।


রোববার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন, মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়েছে।


এটা প্রশংসার দাবি রাখে। আমরা বিশ্বাস করি উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার মাধ্যমে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন সম্ভব।

বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের যে অবস্থায় তাতে আমরা সন্তুষ্ট উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা বুঝি, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ কি ধরনের আর্থ সামাজিক এবং নিরাপত্তার প্রেক্ষাপটে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি আছে।

এই বাস্তুচ্যুত মানুষ শুধু বাংলাদেশের একার চিন্তার বিষয় নয়, এটি আমাদেরও উদ্বেগের বিষয় বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, এটা একদম পরিষ্কার আমরা মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, দ্রুত ও টেকসই প্রত্যাবাসন চাই। সব ক্ষেত্রে ভারতের সহযোগিতা থাকবে। তাদের ফিরিয়ে নেওয়া বাংলাদেশের সমাজ ও অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে ভারত ও বাংলাদেশের অবস্থানের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।

সীমান্তে হত্যা নিয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন, সীমান্তে অবৈধ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনার ৯৫ শতাংশ ঘটে ভারতের সীমান্ত এলাকায়। ৮৭ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটে রাত ১০টার পরে। এ সময় অবৈধ অনুপ্রবেশও ঘটে। এসব ঘটনা বন্ধে সীমান্তে বৈধ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের উদ্যোগ নেওয়া দরকার।

বাংলাদেশ এবং ভারতের সম্পর্ক অনেক গভীর উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বাংলাদেশ আমাদের সবচেয়ে কাছের। দুই দেশের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক শুধু দুই দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, সেটি দুই দেশের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যেও বিরাজমান।

দোরাইস্বামী বলেন, দুই দেশের মধ্যে কিছু ইস্যু থাকবে সেটি স্বাভাবিক। তবে সম্প্রতি দুই দেশের শীর্ষ নেতারা আলোচনা করেছেন, কানেক্টিভিটি, বিজনেস এবং এনার্জি নিয়ে। এ ছাড়া আমরা আলোচনা করেছি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তর পুরোটা ইংরেজিতে দিলেও স্বাগত বক্তব্যে তিনি কিছুটা বাংলাতেও বলেন। মুচকি হেসে দোরাইস্বামী বাংলায় বলেন, আমি বাংলা বুঝতে পারলেও এখনো সঠিকভাবে বলতে পারি না। বাংলা ভাষা শিখছি, সামনে পুরোপুরি শিখে যাবো। তবে আমি অল্প অল্প বাংলা বলতে পারি। এখানে দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলা শিখছি।  

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব সভাপতি আলী আব্বাসের সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম সম্পাদক নজরুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ। অন্যান্যের মধ্যে চট্টগ্রামে নিযুক্ত ভারতের সহকারী হাইকমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জী ও ক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি সালাহ উদ্দিন মো. রেজা বক্তব্য দেন।

আলী আব্বাস চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব পরিদর্শন করে মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। দ্বিপাক্ষিক উন্নয়নের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্কের উন্নয়ন হবে।

তিনি চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী জাদুঘর করার প্রস্তাব দেন রাষ্ট্রদূতের কাছে এবং আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে খাজা বাবার ওরসে বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণকারীদের ভিসা সহজ করার আহ্বান জানান।

...সভায় উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রদূতের সহধর্মিণী সঙ্গীতা দোরাইস্বামী, চট্টগ্রামস্থ ভারতের সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ের দ্বিতীয় সচিব শুভাশীষ সিনহা, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি মনজুর কাদের মনজু, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ আলী, সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলাম, ক্লাবের অর্থ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক, সাংস্কৃতিক সম্পাদক রুপম চক্রবর্তী, ক্রীড়া সম্পাদক দেবাশীষ বড়ুয়া দেবু, গ্রন্থাগার সম্পাদক রাশেদ মাহমুদ, সমাজসেবা ও আপ্যায়ন সম্পাদক আইয়ুব আলী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মিন্টু চৌধুরী প্রমুখ।

প্রীতিলতার প্রতি শ্রদ্ধা
এর আগে দুপুর ২টায় দোরাইস্বামী ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী নারী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের স্মৃতি বিজড়িত স্থান পরিদর্শন করেন। পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাবের ভেতর প্রীতিলতার ছবিতে সম্মান জানান তিনি। পরে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ভাস্কর্যে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।