ওয়াসার প্রকল্পে দুর্নীতি: দুদকের নজরে পিডি আক্তারুজ্জামান

ঢাকা মহানগরীর পানি সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়নে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অর্থায়নে (এডিবি) ৩ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্পে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে প্রকল্পটির পরিচালক (পিডি) ও ঢাকা ওয়াসার অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আক্তারুজ্জামানের বিরুদ্ধে।

ওয়াসার প্রকল্পে দুর্নীতি: দুদকের নজরে পিডি আক্তারুজ্জামান

ঢাকা মহানগরীর পানি সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়নে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অর্থায়নে (এডিবি) ৩ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্পে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে প্রকল্পটির পরিচালক (পিডি) ও ঢাকা ওয়াসার অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আক্তারুজ্জামানের বিরুদ্ধে।

জানা যায়, ‘ঢাকা ওয়াটার সাপ্লাই নেটওয়ার্ক ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্ট’ নামে ৫ বছর মেয়াদী এই প্রকল্পের একটি প্যাকেজের কাজ মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে নির্দিষ্ট একটি বিডারকে পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ প্রকল্প পরিচালক আক্তারুজ্জামানের বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন।

জানা যায়, ২০১৮ সালে প্রকল্পটির চতুর্থ প্যাকেজ আইসিবি- ২.১০ এর আন্তর্জাতিক টেন্ডার আহবান করে ঢাকা ওয়াসা। দরপত্র আহবানের পর এতে মোট ১০টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। সেখান থেকে ৪টি প্রতিষ্ঠানকে কারিগরিভাবে প্রতিক্রিয়াশীল হিসেবে যোগ্য বিবেচনা করা হয়। যেখানে বিডার-১ চায়না ফাস্ট মেটালুরজিকাল গ্রুপ এবং সিএসএডিআই যৌথ ভাবে ২৯৪.৫১ কোটি টাকা, বিডার-২ চায়না কনস্ট্রাকশন সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরো এবং আরএফএল প্লাস্টিকস লিমিটেড যৌথভাবে ৩৩১ কোটি টাকা, বিডার-৩ হুবেই ইন্ডাসট্রিয়াল কনস্ট্রাকশন কোং লি. ২৯১.১৫ কোটি টাকা আর সর্বশেষ বিডার-৪ চায়না জিও ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ৩৬৪.৭০ কোটি টাকা দরপত্র দেখায়।

এর প্রেক্ষিতে ওয়াসা বিডার বাছাইয়ের জন্য এডিবির নিযুক্ত উপদেষ্টার সহায়তায় টেকনিক্যাল মূল্যায়ন কমিটির মাধ্যমে আর্থিক প্রস্তাব মূল্যায়ন করে। পরে মূল্যায়ন কমিটি সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে বিডার-৩ অর্থ্যাৎ হুবেই ইন্ডাসট্রিয়াল কনস্ট্রাকশন কোং লি. এর নাম সুপারিশ করে। যা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ পরে এডিবি বরাবর রিপোর্ট দাখিল করে।

কিন্তু কোন এক অজানা ক্ষমতা বলে সকল চাহিদা পূরণ করার পরেও বিডার-৩ এর নাম বাদ দেয়া হয়। বিপরীতে অবৈধভাবে মোটা অংকের লেনদেনের মাধ্যমে ৪০ কোটি টাকা বেশি দরপত্র দেখানো বিডার-২ চায়না কনস্ট্রাকশন সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরো এবং আরএফএল প্লাস্টিকস লিমিটেড প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার পায়তারা করেন আক্তারুজ্জামান। এমনকি নির্দিষ্ট ওই প্রতিষ্ঠানটিকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য প্রকল্পের ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান এডিবির কর্মকর্তাদেরকেও অনৈতিকভাবে সুপারিশ করেন তিনি।

তবে অভিযোগের বিষয়ে প্রকৌশল নিউজের কাছে ঢাকা ওয়াসার অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক আক্তারুজ্জামান কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন ‘এটা নিয়ে বহু কিছু হয়ে গেছে, আমি এবিষয়ে কোন কথা বলতে চাই না। আপনি যা পারেন করতে পারেন।’

অভিযোগে আরও জানা যায়, এর আগেও প্রকল্পটির পরিচালিত অন্য দুটি প্যাকেজের দরপত্রে অংশ নিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। তবে সংশ্লিষ্ট কাজের অভিজ্ঞতা না থাকাসহ একাধিক কারণে প্রতিষ্ঠান দুটিকে দরপত্র প্রদানের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে প্রশ্ন ওঠে প্রকল্পের চতুর্থ প্যাকেজের দরপত্রে যোগ্য হিসেবে তালিকাভুক্তির সময়ও।

বিডার-২ কে কাজ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিতর্ক ওঠে ওয়াসার বোর্ড সভায়ও। তবে অদৃশ্য ক্ষমতা বলে আক্তারুজ্জামান সম্পূর্ণ অবৈধভাবে পরবর্তী বোর্ড সভায় বিডার-২ কে কাজ পাইয়ে দেওয়ার অনুমোদন করে নেন, বিরোধিতাকারী বোর্ড সদস্যদের অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে। এছাড়া আক্তারুজ্জামানের বিরদ্ধে অবৈধ উপায়ে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনেরও একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

বেশ কয়েক বছর আগে ঢাকা শহরে নগরবাসীর জন্য সুপেয় পানি সরবরাহ ব্যবস্থার একটি শক্তিশালী, টেকসই ও আধুনিক পাইপ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেয় ঢাকা ওয়াসা। সেই লক্ষ্যে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) সাথে ৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ প্রদানের শর্তে ২০১৬ সালে ৫টি প্যাকেজে বাস্তবায়িত ৫ বছর মেয়াদী একটি প্রকল্পের ঋণ চুক্তি করে ঢাকা ওয়াসা। যার কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২১ সালে। তবে দীর্ঘ ৩ বছর পেরিয়ে গেলেও প্রকল্পের সন্তোষজনক দৃশ্যমান কার্যক্রম না দেখায় এটিকে লাল তালিকাভুক্ত করে এডিবি। একই সাথে প্রকল্প ঘিরে বিস্তর দুর্নীতির প্রমান থাকায় প্রকল্পটিকে দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করে দুর্নীতি দমন কমিশন।

প্রকৌশল নিউজ/শা