মোবাইল নম্বরের সূত্রে ধরা পড়লো আইস সিন্ডিকেটের ১০ সদস্য

একটি মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে রাজধানীতে ‘আইস চক্রের’ সক্রিয় ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। ঢাকার অভিজাত এলাকা ঘিরে গড়ে ওঠা চক্রটি বনানী, উত্তরা, বনশ্রী ও খিলগাঁও এলাকায় ‘আইসের’ শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে বলে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ভাষ্য।

মোবাইল নম্বরের সূত্রে ধরা পড়লো আইস সিন্ডিকেটের ১০ সদস্য

একটি মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে রাজধানীতে ‘আইস চক্রের’ সক্রিয় ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। ঢাকার অভিজাত এলাকা ঘিরে গড়ে ওঠা চক্রটি বনানী, উত্তরা, বনশ্রী ও খিলগাঁও এলাকায় ‘আইসের’ শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে বলে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ভাষ্য।

গ্রেপ্তারদের অধিকাংশই উচ্চবিত্ত শ্রেণির সন্তান। তাদের মধ্যে দুইজন নারীও রয়েছেন। গ্রেপ্তাররা হলেন- রুবাইয়াত (৩২), রোহিত হোসেন (২৭), মাসুম হান্নান (৪৯), আমানুল্লাহ (৩০), মোহাইমিনুল ইসলাম ইভান (২৯), মুসা উইল বাবর (৩৯), সৈয়দা আনিকা জামান ওরফে অর্পিতা জামান (৩০), লায়লা আফরোজ প্রিয়া (২৬), তানজিম আলী শাহ এবং হাসিবুল ইসলাম (২২)।

সিন্ডিকেটের এই ১০ জনকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে অর্ধকোটি টাকার প্রায় আধা কেজি ভয়ংকর মেথামফিটামিন মাদক ‘আইস’ বা ক্রিস্টাল মেথ এবং পাঁচ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ (সংশোধিত ২০২০) অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট থানায় মোট আটটি মামলা করা হয়েছে।

শনিবার রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের ঢাকা মেট্রো (উত্তর) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আইস সিন্ডিকেট ও গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তথ্য তুলে ধরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের প্রধান অতিরিক্ত পরিচালক মো. ফজলুর রহমান।

সংবাদ সম্মলনে ফজলুর রহমান বলেন, এরা মাদক ব্যবসার একটি বড় সিন্ডিকেট। অভিজাত এলাকায় তাদের বিচরণ। প্রত্যেকেই উচ্চবিত্ত শ্রেণির সন্তান অথবা ব্যবসায়ী। শুক্রবার বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত বনশ্রী, বারিধারা, উত্তরা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। একমাস আগে একটি মোবাইল নম্বর নিয়ে কাজ করতে গিয়ে এই সিন্ডিকেটের সন্ধান মেলে।

অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান বলেন, গ্রেপ্তারদের মধ্যে কেউ কেউ কৌতুহল থেকে আইস নামের মাদক সেবন করতে গিয়ে ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা এক গ্রাম আইস ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায় কেনাবেচা করত।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তারদের মধ্যে সবাই বিত্তবান পরিবারের সন্তান। ইয়াবা ও আইসে আসক্তির পর পাশাপাশি তারা নিজেরাই জড়িয়ে পড়েন কারবারে। তাদের কেউ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী, কেউবা একাধিক আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনের মালিক, কেউবা মালয়েশিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে এসেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে ফজলুর রহমান বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে আইস নামের মাদকটি ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে। আমাদের কাছে তথ্য ছিল। একটি মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে ও গোয়েন্দা কৌশল ব্যবহার করে বনানী, উত্তরা, বনশ্রী ও খিলগাঁও এলাকায় আইসের শক্তিশালী নেটওয়ার্ককে আমরা শনাক্ত করতে সক্ষম হই। আমাদের পাঁচটি পৃথক টিম একযোগে অভিযান চালিয়ে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে।’

সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেণীর যুব সমাজের মধ্যে মাদকটি ছড়িয়ে পড়ার উদ্বেগ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। গ্রেপ্তার ১০ জনের চক্রটির মূলহোতাকে আমরা খুঁজছি। এরা প্রত্যেকেই মাদকসেবী। তাদের প্রত্যেকের আলাদা পেশাও রয়েছে। সেসব পেশার আড়ালেই তারা আইসের কারবার করছেন।’

ফজলুল রহমান জানান, ‘আইস’ বা ‘ক্রিস্টাল মেথ’ দেশে সর্বপ্রথম ধরা পড়ে ২০০৭ সালে। তারপরে ১০ থেকে ১২ বছর এর খবর ছিল না। ২০১৯ সালে আবারও মাদকটির আবির্ভাব ঘটে। সে বছর রাজধানীর ধানমন্ডিতে আইস তৈরির কারখানার সন্ধান মিলে।

আইস কীভাবে দেশে আসছে প্রশ্নে ফজলুর রহমান বলেন, ‘পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে আসার তথ্য পেয়েছি। কীভাবে, কোন পথে, কারা এ ভয়ঙ্কর মাদক নিয়ে আসছেন তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’

মাদক দ্রব্য অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগারের বৈজ্ঞানিক সহকারী শফিকুর রহমান সরকার জানান, ইয়াবার চেয়ে ২০ গুণ বেশী শক্তিশালী ক্রিস্টাল মেথ বা আইস। পাঁচশ গ্রাম আইস দিয়ে এক লাখ ইয়াবা তৈরি করা সম্ভব।

তিনি বলেন, বহনে সহজ আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং পরিবারের সদস্যদের ফাঁকি দেওয়া সম্ভব বলে এখন মাদক ব্যবসায়ীরা ইয়াবার চেয়ে আইস নিয়ে আসছেন।

প্রকৌশল নিউজ/এমআরএস