আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় মুজিব শতবর্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার


প্রকৌশলী মো: সিরাজুল ইসলাম:
আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় মুজিব শতবর্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার
  • Font increase
  • Font Decrease

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আশ্রয়হীন মানুষদের আশ্রয় দেয়ার জন্য মুজিব শতবর্ষের উপহার হিসেবে আশ্রায়ণ প্রকল্পের আওতায় ঘর প্রদানের যে কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন তা যুগান্তকারী একটি পদক্ষেপ। সরকারের এই উদ্যোগ নিসন্দেহে প্রশংসার দাবীদার। কিন্তু যে ঘর উপহার হিসেবে প্রদান করা হচ্ছে তার অনেক ভবন ধ্বসে পড়ছে বা নীচু জায়গায় করার কারণে ভবনের ভিতরে পানি ঢুকছে বা বিভিন্ন কারণে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে, সরকারের ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে যা সত্যি দু:খজনক। যেখানে এই ঘরগুলি পেয়ে দারিদ্র জনগণ অনেক আনন্দিত হওয়ার কথা ছিল কিছু কিছু ক্ষেত্রে তার উল্টোটা হচ্ছে যা অনভিপ্রেত।

এই কাজের সাথে যারা জড়িত তাদেরকে দোষারোপ করে শাস্তি প্রদান ও করা হচ্ছে। মূলত ভবন ধ্বস বিভিন্ন কারণে হচ্ছে। ডিজাইন এবং জায়গা নির্ধারণ যদি সঠিক ভাবে না হয় বা জায়গাভেদে যদি ডিজাইন এর ভিন্নতা না আনা হয় বিশেষ করে ভীতের ডিজাইন তাহলে এ ধরণের ভবন ধ্বস অব্যাহত থাকবে এবং ডিজাইন অনুযায়ী সঠিক নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করলেও তা রোধ করা যাবে না।

ভবণ ধ্বসের কারণ সমুহ:

১। ভবনের ভীত এর চওড়া মাত্র ১০" এবং মাটির গভীরে মাত্র ১ ফুট দেয়া হয়েছে। বেশির ভাগ জায়গা ভরাট মাটি। যার কারণে ফাউন্ডেশন বসে যাচ্ছে এবং ভবন ভেঙ্গে পড়ছে।

২। বারান্দার সামনে ব্রিক পিলারের উপরে এবং ভবনের চতূর্পাশে জানালার উপরে লিন্টেল দেয়া হচ্ছে না ফলে দেয়ালের পার্শ্বে ফাটল সৃষ্টি হচ্ছে।

৩। বেশিরভাগ ভবনের প্লিন্থ এর উচ্চতা মাত্র এক ফুট প্রদান করা হচ্ছে ফলে ভবনের মধ্যে সহজেই পানি ঢুকে যাচ্ছে। যার কারণে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।

৪। ভবনের প্ল্যান এ দেখা যায় সামনের বারান্দা খোলা এবং ভবনের সামনে একটা মাত্র দরজা দেয়ায় ঘরের ভিতর দিয়ে পিছনে টয়লেট এবং রান্নাঘর ব্যবহার করতে হয়। ফলে প্রাইভেসী মারাত্মকভাবে নষ্ট হচ্ছে।

৫। বেশিরভাগ জায়গায় নতুন মাটি ভরাট করে তার উপর নরম মাটিতে ভবনের ভীত দেয়া হচ্ছে ফলে ভীত বসে যাচ্ছে এবং ভবন ভেঙ্গে পড়ছে।

প্রতিকার এর জন্য প্রয়োজনীয় সুপারিশ:

১। ভবনের নকশায় কিছু পরিবর্তন এনে বারান্দাটা আরো চওড়া করে বারান্দার একপার্শ্বে টয়লেট এবং আর এক পার্শ্বে রান্নাঘর করা যেতে পারে। বারান্দার সামনে দেয়াল এবং গ্রীল দিয়ে ঘিরে দিতে হবে। দুইটা রুম আলাদা আলাদা ব্যবহারের জন্য আলাদা দরজা স্থাপন করতে হবে।(প্রস্তাবিত নক্সা অনুযায়ী )।

২। ভবনের ভীত কমপক্ষে দুই ফুট চওড়া এবং  দুই ফুট উচ্চতায় প্রদান করতে হবে সিসি ঢালাইসহ নক্সা অনুযায়ী করা যেতে পারে।

৩। ভবনের প্লিন্থ এর উচ্চতা কমপক্ষে দুই ফুট দিতে হবে এবং বারান্দার সামনে ও ভবনের চতূর্পাশে আর সি সি লিন্টেল প্রদান করতে হবে।

৪। যদি ভরাট মাটির উপর ভবন করতে হয় তাহলে শক্ত মাটি থেকে মোটাদানার বালি ভরাট করে প্রয়োজনীয় কম্প্যাকশন করে তারপর ভীত ঢালাই করতে হবে। কোন ভাবেই ভরাট মাটির উপর সরাসরি ভবনের ভীত দেয়া যাবে না।

৫। কোন এলাকা যদি বন্যাপ্রবণ বা ধ্বসে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে ঐ এলাকা ভরাট করে চারিদিকে Retaining wall করতে হবে যাতে মাটি কোন ভাবেই সরে না যায়। নতুন জায়গা ভরাট করার প্রয়োজন হলে মাটি দিয়ে ভরাট না করে বালি দিয়ে ভরাট করতে হবে।

৬। যে সকল যায়গায় ইতিমধ্যে ভরাট মাটির উপর অনেক ভবন একসাথে করা হয়েছে সে সকল জায়গায় অনতিবিলম্বে চারিদিকে Retaining Wall নির্মাণ করে ভাঙ্গনরোধ করতে হবে। নির্মাণ তদারকি টিম এ ভবন নির্মাণ কাজের অভিজ্ঞ প্রকৌশলীদের সম্পৃক্ত করতে হবে।

সর্বোপরি মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে  ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনীয়ার্স-বাংলাদেশ (আইডিইবি) দরিদ্রদের মাঝে ঘর প্রদানের জন্য যে প্ল্যান ও পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে তা অনুসরণ করা যেতে পারে। প্রক্কলিত মূল্য : ২.৫ লাখ।

(মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার যেন সঠিকভাবে দরিদ্র জনগণ ব্যবহার করতে পারে তার তাগিদ থেকেই আমার ব্যক্তিগত মতামত।)

লেখক: প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম,সহকারী প্রকৌশলী ইইডি,সভাপতি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতি ও জনসংযোগ ও প্রচার সম্পাদক আইডিইবি।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। প্রকৌশলনিউজের এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)