আফগানিস্তানে অবিলম্বে ডিজিটাল পরিচয় এবং বায়োমেট্রিক ডাটার সুরক্ষার আহ্বান


প্রকৌশল প্রতিবেদক :
আফগানিস্তানে অবিলম্বে ডিজিটাল পরিচয় এবং বায়োমেট্রিক ডাটার সুরক্ষার আহ্বান
  • Font increase
  • Font Decrease

আর্টিকেল নাইনটিনসহ ৫০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক নাগরিক অধিকার সংগঠন ও বিশিষ্ট অধিকারকর্মীদের জোট আফগানিস্তানে বিদেশি সরকার এবং সহায়তা সংস্থাগুলির তৈরি বায়োমেট্রিক এবং অন্যান্য ডিজিটাল পরিচয়ের তথ্যভাণ্ডারের (ডাটাবেস) জরুরি সুরক্ষা বা প্রয়োজনে মুছে ফেলার জন্য সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক পক্ষগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে।

বিবৃতিতে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, সক্রিয় ডিজিটাল সিস্টেমের মধ্যে থাকা ব্যক্তিগত তথ্য যদি তালেবানের হস্তগত হয়, তবে তা মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক, সংখ্যালঘু এবং নির্দিষ্ট ধর্মীয় বিশ্বাসের লোকদের ক্ষতি করার লক্ষ্যে ব্যবহার করা হতে পারে।

মঙ্গলবার আর্টিকেল নাইনটিন দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল এই বিষয়ে এক পৃথক বিবৃতিতে বলেছেন, ’’বায়োমেট্রিক এবং ডিজিটাল আইডেন্টিটি সিস্টেম যা আফগানিস্তানে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ বিনির্মাণ এবং নিরাপত্তার জন্য তৈরি করা হয়েছে, এখন তার সম্পূর্ণ বিপরীত অর্থাৎ নেতিবাচক ব্যবহার হতে পারে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই আশঙ্কার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। তালেবানের উত্থানে এ পর্যন্ত অন্য অনেক অমীমাংসিত বিষয়ের মতো এই ডিজিটাল সিস্টেম এবং ডাটাবেসের সম্ভাব্য ক্ষতিকারক ব্যবহার গুরুতর উদ্বেগ এবং হুমকি সৃষ্টি করেছে। এজন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই দায়িত্ব নিয়ে এসমস্ত ডাটার ব্যবহার সীমিত করা এবং সুরক্ষা নিশ্চিতে অবিলম্বে পদক্ষেপ করতে হবে।’’ 

৩৬টি আন্তর্জাতিক অধিকার সংগঠন এবং ২০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির ওই বিবৃতিতে ডাটার সুরক্ষার জন্য ব্যবস্থা নিতে সুনির্দিষ্টভাবে মার্কিন সরকার, বিশ্বব্যাংক, জাতিসংঘ, মানবিক সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনাকারী সংস্থা এবং বেসরকারি খাতের সরবরাহকারীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। কারণ, এদের বিভিন্ন ডিজিটাল প্রযুক্তি, সরঞ্জাম ও সিস্টেম এতোদিন আফগানিস্তানে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। যৌথ বিবৃতিতে আফগানিস্তানে বহুবছর সময় নিয়ে প্রতিষ্ঠা করা ডিজিটাল সিস্টেমের ধরন ব্যাখ্যা করা হয়েছে। একইসঙ্গে আশঙ্কা সত্যি করে কয়েকটি স্থানের বায়োমেট্রিক যন্ত্রপাতির নিয়ন্ত্রণ যে ইতিমধ্যেই তালেবানের হাতে পড়েছে; সেই সংক্রান্ত প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বিবৃতিতে বিদ্যমান সিস্টেমের পরিচালনা এবং আরও ঝুঁকি প্রতিরোধের জন্য আট-দফা কর্মপরিকল্পনা অবিলম্বে বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছে। 

সুপারিশগুলো হলো:

১. যেখানেই সম্ভব হয়, অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট সিস্টেম বন্ধ করুন এবং নিরাপদে ডাটা মুছে দিন।

২. মানবাধিকারের পূর্ব মূল্যায়ন ছাড়াই আফগানিস্তানে বায়োমেট্রিক্সের অব্যাহত ব্যবহারের উপর স্থগিতাদেশ আরোপ করুন। এই পদক্ষেপ এটা নিশ্চিত করবে যে, এই ধরনের কোনও সিস্টেম নিরাপদ, অন্তর্ভুক্তিমূলক, ত্রুটিপ্রবণ নয় এবং প্রমাণীকরণের (অথেনটিকেশন) সবচেয়ে কম অনুপ্রবেশকারী মাধ্যম।

৩. উপকারভোগী এবং কর্মীদের তথ্যে কোন কোন পক্ষের প্রবেশ (এক্সেস) রয়েছে তা সতর্কতার সাথে নিয়ন্ত্রণ ও নিরীক্ষা করুন। তথ্যে প্রবেশের ধরন দেখে যাচাই করুন এটা কোন ব্যক্তির প্রোফাইল এবং দুর্বল কমিউনিটির ওপর নজরদারির জন্য করা হচ্ছে কি না।

৪. অজ্ঞাত বা অপরিচিত কেউ যাতে এমন কোনভাবে সিস্টেমে ঢুকতে না পারে যা অন্য কোন ব্যক্তির ক্ষতির কারণ হয়। এজন্য এটা নিশ্চিত করুন যে, সিস্টেমে কারোর অবাধ প্রবেশের ব্যবস্থা না থাকে।

৫. দুর্বল গোষ্ঠী এবং ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের তৎপর জঙ্গি এবং অন্যান্য প্রতিক্রিয়াশীলরা ভয় দেখাতে পারে। তাই আফগানিস্তানে শারীরিকভাবে অবস্থিত কম্পিউটার অবকাঠামো থেকে ডাটা

এদের প্রভাবের বাইরে সরিয়ে ফেলুন।

৬. অননুমোদিত আপলোড এবং ডাটা কিংবা ডাটাবেস স্থানান্তর সনাক্ত করতে ’ডাটা লিক সুরক্ষা’ প্রয়োগ করুন।

৭. যাদের ডাটা আক্রান্ত হয়েছে বা যারা ঝুঁকিতে আছেন তাদের অবহিত করার জন্য, ডাটার অপব্যবহারের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহায়তা করার জন্য এবং কোনও ব্যক্তির ডাটায় অনিচ্ছাকৃত প্রবেশ যাতে আরও ক্ষতি না করে তা নিশ্চিত করার জন্য প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ নিন।

৮. সনাক্তকৃত অথবা জ্ঞাত তথ্য লঙ্ঘনের ঘটনা প্রকাশ্যে ঘোষণা করুন এবং কারো ব্যক্তিগত তথ্য ওই লঙ্ঘনের ঘটনার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল কিনা তা যাচাই করার জন্য প্রমাণীকরণের ব্যবস্থা (অথেনটিকেশন মেকানিজম) রাখুন।

প্রকৌশল নিউজ/এমআরএস