গণপূর্ত ইএম সার্কেল-৩ এ ঠিকাদার শ্যালক ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী দুলাভাইয়ের সিন্ডিকেট


এম এ রকি ও মির্জা রুমন
গণপূর্ত  ইএম সার্কেল-৩ এ ঠিকাদার শ্যালক ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী দুলাভাইয়ের সিন্ডিকেট
  • Font increase
  • Font Decrease

সরকারী বার্ষিক কর্মসম্পাদনের তালিকায় সবার শেষে অবস্থান গণপূর্ত অধিদপ্তরের। কারণ হিসেবে দেখা যায় জিকে শামীম, গোল্ডেন মনির এ সেক্টর থেকে বিদায় নিলেও কিছু প্রকৌশলী নিজেরাই ছোট ছোট সিন্ডিকেট করে সুযোগের সদ্ব্যবহার করছেন। নিজেরা নামে-বেনামে ভাই বা শ্যালকদের দিয়ে কাজ করিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। সংসদ ভবনের মতো স্পর্শকাতর এলাকায় কাজের নামে নিজের শ্যালক দিয়ে সিন্ডিকেট করে ব্যবসা শুরু করেছেন গণপুর্ত ই/এম সার্কেল-৩ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল কালাম। সরকারি চাকুরী নীতির কোন তোয়াক্কা না করে আপন শ্যালককে দিয়ে বেশীরভাগ ঠিকাদারী কাজ করিয়ে নিচ্ছেন তিনি। এক্ষত্রে তার অধীনস্থ প্রকৌশলীগণকে দিয়ে জোর করে ‘এপ্রুভড ইস্টিমেট’ তার শ্যালক সাইফুলের হাতে তুলে দেন। যা ইজিপি’র দরপত্রের নতুন জালিয়াতি। ভুক্তভোগী ঠিকাদারদের অভিযোগ, তার শ্যালকের নামে করা ‘ইন্ট্রিগেটেড কনস্ট্রাকশন সার্ভিসেস’ লাইসেন্স করে নিজেই ব্যবসা করে যাচ্ছেন। শ্যালক-দুলাভাইয়ের কীর্তিকলাপ নিয়ে ৭ জানুয়ারী ২০২১ তারিখে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ ভুক্তভোগী ঠিকাদারদের পক্ষে মনির হোসেন একটি অভিযোগ জমা দেন।

অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, গণপূর্ত ইএম সার্কেল-৩ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো: আবুল কালাম ও তার আপন শ্যালক সাইফুল এর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘ইন্টিগ্রেটেড কনস্ট্রাকশন সার্ভিসেস’ এর হাতে জিম্মি  হয়ে আছে গণপূর্ত অধিদপ্তরের এই সার্কেল।

সরকারি চাকরি বিধি অনুযায়ী নিজ পরিবারের সদস্য দিয়ে নিজ অধিক্ষেত্রে কোন ধরনের ব্যবসা করার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও গণপূর্ত ইএম সার্কেল-৩ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী  আবুল কালাম তা মানেননি। নিজ শ্যালক সাইফুলের মালিকানাধীন ‘ইন্টিগ্রেটেড কনস্ট্রাকশন সার্ভিসেস’ নামে খুলেছেন একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। শুধু তাই নয়, এই প্রতিষ্ঠানের নামে কোটি কোটি টাকার টেন্ডারের অনুমোদন করেছেন। সেই সাথে এই প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু টেন্ডারে মূল্যায়ন পর্যালোচক হিসেবে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো: আবুল কালাম নিজেই ছিলেন। গণপূর্ত ইএম সার্কেল-৩ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কালামের অধীনস্ত কাঠের কারখানা বিভাগে ৮ কোটি, মেকানিক্যাল কারখানা বিভাগে ৪ কোটি, ইএম বিভাগ-৭ এ ১২ কোটি এবং ইএম বিভাগ-৮ এ ৬ কোটিসহ ৩০ কোটি টাকার অধিক কাজ রয়েছে তার আপন শ্যালক সাইফুলের প্রতিষ্ঠানের নামে।

প্রকৌশলী আবুল কালাম ও তার শ্যালকের আধিপত্যের কারণে অন্য ঠিকাদাররা সেখানে কোন কাজই পাচ্ছেন না। তিনি এতোটাই দাপুটে ও একক প্রভাবশালী হয়ে উঠেছেন যে তার শ্যালক সাইফুলকে কাজ না দেবার কারণে অন্যায় ভাবে মিথ্যা অভিযোগ এনে ই/এম বিভাগ-৮ থেকে নির্বাহী প্রকৌশলী শরীফ মো: আব্দুল্লাহ আল মাসুমকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে প্রকৌশলী মো: আবুল কালাম এর নামে।

নিজ কর্মক্ষেত্র ছাড়াও অন্যান্য সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলীদের উপর সাইফুলকে কাজ পাইয়ে দিতে চাপ প্রয়োগেরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

এছাড়াও রাজস্ব বাজেটে ১২ লক্ষ টাকার প্রাক্কলন পাশ করার আইন থাকলেও বিপুল ঘুষের বিনিময়ে আবুল কালাম ১২ লক্ষ টাকার উর্দ্ধে ২ কোটি টাকার প্রাক্কলন উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে না পাঠিয়ে নিজেই তা পাশ করিয়ে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল কালাম এর বিরুদ্ধে রয়েছে ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগ। কোন টেন্ডার তার কাছে গেলে তা বাতিল করার কথা বলে কিংবা পুন: টেন্ডার/পুনর্মূল্যায়নের কথা বলে ঠিকাদারদেরকে জিম্মি করেন তিনি।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, সাইফুল তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী দুলাভাইয়ের কল্যাণে আজ প্রায় শতকোটি টাকার সম্পদের মালিক। তার রয়েছে ব্রান্ড নিউ হ্যারিয়ার লেকসাস গাড়ি, বাড্ডাতে ৬তলা ভবন, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ডি ব্লকে ৩ টি ৫ কাঠার প্লট। 

অন্যদিকে, গণপূর্ত ইএম সার্কেল-৩ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো: আবুল কালাম এর রয়েছে গুলশান নিকেতনে ৩ হাজার বর্গফুটের ২টি ফ্ল্যাট, আফতাব নগরে ৫ কাঠার ৫টি প্লট, বনশ্রীতে ৫হাজার বর্গফুটের আলিশান ফ্ল্যাট, কুমিল্লার নবীনগরে ৪৫ একর জমি, এলিয়ন ব্রান্ডের নতুন গাড়ি ও বিপুল ব্যাংক ব্যালেন্স।

অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত সার্কেল-৩ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল কালামকে ফোন করলে তার স্ত্রী ফোন রিসিভ করে প্রতিবেদককে জানান, বর্তমানে তিনি এই ফোন নম্বরটি ব্যবহার করছেন না। তিনি আরও বলেন, অভিযোগের বিষয়ে তিনি তার স্বামী (তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কালাম) কে জানাবেন। 

এদিকে, তার শ্যালক ঠিকাদার সাইফুলকে বারবার ফোন দিলেও তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

*** গণপূর্তে আবারো অশনি সংকেত!

*** গণপূর্ত অধিদপ্তরের নতুন প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামিম আখতার